কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধারণা সঠিক নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ভয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা তথ্য উন্মোচন করেছেন। এই গবেষণায় তারা অতি কমন একটি বিষয় ব্যবহার করেছেন। সেটি হচ্ছে ইঁদুরের বিড়ালভীতির বিষয়টি। একটি অতি পরিচিত বিষয়কে কাজে লাগিয়ে কিভাবে অসাধারণ অর্জন সম্ভব এটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিজ্ঞানীরা জানতে উদগ্রীব ছিলেন কিভাবে ইঁদুর বেড়ালের অবস্থান বুঝতে পারে এবং ভয়ের সংকেত লাভ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এক্ষেত্রে সবার আগে সাফল্য দেখিয়েছেন। তারা ইঁদুরের বিড়াল বা কুকুরভীতির কারণ বের করেছেন। ইঁদুরের ‘ভোমেরোনাসাল’ অর্গান নামে এক ধরনের সংবেদনশীল অঙ্গ আছে। অন্যদিকে বিড়াল বা কুকুরের মতো শিকারি প্রাণীরা এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন করে। ইঁদুর তার বিশেষ এ অঙ্গের সাহায্যে আগেভাগেই এ প্রোটিনের গন্ধকে বিপদের গন্ধ হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, শিকারি প্রাণীর মুখে লালা বা স্যালাইভা থেকে এক ধরনের রাসায়নিক সঙ্কেত পায় ইঁদুর। এ সঙ্কেতই ইঁদুরের জন্য ভীতির কারণ। এ স্যালাইভা মূলত এক ধরনের প্রোটিন। এ প্রোটিনটির নাম মাপস। এ প্রোটিনটির গন্ধই ইঁদুরের সংবেদনশীল অঙ্গের মাধ্যমে ধরা পড়ে। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘সেল’ সাময়িকীতে।
গবেষণায় জানা গেছে, ‘ভোমেরানাসাল’ অর্গানের নিউরনগুলো শিকারি প্রাণীর প্রোটিনের সঙ্কেত পেয়ে উদ্দীপ্ত হয়। আর এর ফলেই ইঁদুর ভয় পেয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় ও চারপাশে ভয়ের উৎস খুঁজতে থাকে।
ইঁদুরের এই অর্জনকে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন মানুষের ক্ষেত্রে। তারা দেখিয়েছেন মস্তিষ্কের কোন কোন স্নায়ুবিক গঠন এবং কোন কোন জিন সার্কিট এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এতোদিন ধরে লিম্বিক সিস্টেমের নিচের দিকের অংশ অ্যামিগডালাকে বলা হতো ভয়ের অন্যতম উৎস। বিজ্ঞানীরা অ্যামিগডালার সাথে আরো একটি বিষয়যুক্ত করেছেন তা হচ্ছে সেরেব্রাল কর্টেক্সের গোলাপী কোষের জালিকাগুলো। এই জালিকাগুলো থেকে যে স্নায়ুবিক সূত্র অ্যামিগডালাতে গিয়েছে তাই ধারণ করে ভয়ের সচেতন ও অবচেতন যোগসূত্র।
মানুষের ভয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করেছেন এরূপ বিজ্ঞানীরা বিড়াল ও ইঁদুরের মাধ্যমে অর্জিত এই সাফল্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নিউওয়র্কের সেন্টার ভর নিউরোসায়েন্সের বিজ্ঞানী জোসেফ লেডক্স বলেন , ভয় মানুষের অত্যন্ত সহজাত একটি বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তাই তুলনামূলক স্নায়ুবিজ্ঞানের মাধ্যমে এটি সম্পর্কে গোছানো তথ্য পাওয়া সম্ভব। ভয়ের বিজ্ঞানকে আরোবেশি সুস্পষ্ট করার ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞানীরা যে প্রয়াস দেখিয়েছেন তা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিওন নাং সি জানান , ভয়ের সাথে জড়িত নতুন জেনেটিক বিন্যাস ও নিউর‌্যাল সার্কিট আবিষ্কৃত হয়েছে জেনে ভালো লাগছে। তবে আমার ধারণা ভয়ের সাথে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার জিন আবিষ্কার এখনো বাকী রয়ে গেছে। এই জিনগুলো আবিষ্কার হলে আমরা তখন বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ , চেতনাবোধ , ভাষা , স্মৃতি-বিস্মৃতির সাথে ভয়কে আরো গোছানো উপায়ে উপস্থাপন করতে পারবো এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে পারবো।
অনন্তকাল ধরে বিস্তৃত হবে মহাবিশ্ব : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এই মহাবিশ্বের ভাগ্য গণনা করেছেন। গ্যালাক্টিক লেন্স ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন, এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরেই বিস্তৃত হতে থাকবে। খবর বিবিসি অনলাইনের।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, মহাবিশ্বের ভাগ্য নির্ণয়ে জ্যোতির্বিদরা দূরের নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর এ জন্য তারা ব্যবহার করেছেন অ্যাবেল ১৬৮৯ নামে গ্যালাক্টিক ক্লাস্টার। ডার্ক ম্যাটারসহ এ গ্যালাক্সি ক্লাস্টারটি গ্যালাক্টিক লেন্স হিসেবে কাজ করে।
ডার্ক এনার্জি হলো রহস্যময় এক শক্তি যা মহাবিশ্বের বিস্তৃত হওয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে। আর এ ডার্ক এনার্জির বণ্টন শক্তি জেনেই গবেষকরা মহাবিশ্বের ভাগ্য বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, এ মহাবিশ্ব একদিন শীতল, প্রাণহীন পতিত স্থানে পরিণত হবে।
জানা গেছে, এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির গবেষকরা। আর গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স সাময়িকী’তে।
গবেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ডার্ক এনার্জি আমাদের মহাবিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে অবস্থান করছে এবং এটি আমরা দেখতে পাই না। আমরা কেবল এর অস্তিত্ব টের পাই। কারণ এই ডার্ক এনার্জির জন্যই ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে মহাবিশ্ব।
বায়ুম-ল থেকেই বিদ্যুৎ সংগ্রহ : সৌরশক্তি ব্যবহার করে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তেমনি বায়ুশক্তি বা আবহাওয়া থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সম্প্রতি ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাম্পিয়ানসের (ইউসি) গবেষক ফার্নান্দো গেলেমবেক বায়ুম-ল থেকেই বিদ্যুৎ সংগ্রহের উপায় উদ্ভাবন করেছেন। খবর গিজম্যাগের।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, গবেষক ফার্নান্দো গেলেমবেক একজন রসায়নবিদ। তিনি ভবিষ্যতের বিকল্প শক্তির উৎস হতে পারে এমন শক্তি উৎস এবং বায়ুম-ল থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের উপায় নিয়ে গবেষণা করছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সৌরশক্তি ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যেমন ভাবনার প্রয়োজন হয় না এক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটতে পারে।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, গবেষকরা ধারণা করতেন বায়ুম-লে ভেসে থাকা পানির কণাগুলো চার্জ নিরপেক্ষ এমনকি তারা চার্জিত ধূলিকণার সঙ্গে এলেও এই ধর্ম বজায় থাকে।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধারণা সঠিক নয়। সিলিকা এবং অ্যালুমিনিয়াম ফসফেটের ক্ষুদ্র কণাগুলো আর্দ্র আবহাওয়ায় পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে রূপান্তরিত হতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আর্দ্র আবহাওয়ায় এই চার্জিত কণাগুলো সংগ্রহ করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতিকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘হাইগ্রোইলেকট্রিসিটি’ বা আর্দ্র বিদ্যুৎ।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে আরো জানা গেছে, গবেষকরা এমন একটি পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছেন যার ফলে আবহাওয়ার বিদ্যুতকে বশ করে কাজে লাগানো যাবে এবং বজ্রপাতের বিষয়টি থাকবে না। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ২৪০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন গবেষক ফার্নান্দো গেলেমবেক।
বধিরদের গান শোনাতে ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট : কানের ককলিয়ার পর্দাটির ইমপ্ল্যান্ট করলেই বধিরদের সুর শোনানো সম্ভব। জানা গেছে, সম্প্রতি এক নারীর ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের সাফল্য তার কানে সুর পেঁৗছে দিতে পেরেছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসের।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে কানে বসানো হয় একটি মাইক্রোফোন এবং প্রসেসর। এটি হেয়ারিং এইডের মতো কানের পেছন দিকে লাগিয়ে রাখতে হয়।
জানা গেছে, এটি বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে অডিটরি নার্ভকে উদ্দীপিত করে এবং এর ফলেই শব্দ শুনতে পান ব্যবহারকারী।
গবেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টে প্রচুর শব্দ তৈরি হয় এবং এ শব্দ থেকেই বধিরদের মস্তিষ্ক শব্দ পৃথক করতে এবং শব্দ বিষয়ে অনুভূতি তৈরি করে। সে কারণে অর্কেস্ট্রার সুর টের পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

Spread the love
%d bloggers like this: