ছেড়াদ্বিপ পরিষ্কার করলো ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যটন কেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বিপে মাত্র ১৩৭২ টাকা ব্যয়ে যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক আবর্জনা কিনে নিলো পরিবেশবান্ধব ট্যুরিস্ট গ্রুপ ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশ।

গত ৮ থেকে ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত শিক্ষা সমাপনী ট্যুরে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ওয়াইল্ড ট্যুরিজমের কাছে বিক্রি করে।

ট্যুর বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশের পরিচালক (অর্থ) তানজিনা হোসেন চৈতী জানান, আমরা প্রতিটি প্লাস্টিকের প্যাকেট ১ টাকা, ছোট প্লাস্টিকের বোতল ২টাকা, দেড় লিটার পর্যন্ত পানির বোতল ৩টাকা এবং ৫ লিটারের পানির বোতল ৫টাকা দরে কিনেছি। সব মিলিয়ে ছেড়াদ্বিপ থেকে ২ বস্তা প্লাস্টিক উদ্ধার করেছি। যার জন্য আমাদের ব্যয় করতে হয়েছে মাত্র ১৩৭২টাকা। ব্যবসা নয়, মূলত পর্যটন কেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতেই আমরা এ কর্মসূচি পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন কত সুন্দর একটি দ্বিপ অথচ পর্যটকরা যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে এর পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। ছোট ছোট অনেক প্লাস্টিক স্ট্র সাগরে ভাসতে দেখেছি। যা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই দেশের পর্যটন সম্পদ রাক্ষার স্বর্থেই এ কর্মসূচি পালন করেছি।

ওয়াইল্ড ট্যুরিজমের এ এমন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম’র শিক্ষার্থী রওনক মিরাজ বলেন, সেন্টমার্টিন ঘুরে আমরা আসলেই অনেক বেশী উচ্ছ্বসিত। এ দ্বিপ আমাদের দেশের একটি সম্পদ। কিন্তু ইদানীং মানুষের অসচেতনতা আর অসহযোগিতামূলক আচরণের জন্য দ্বিপের সৌন্দর্য্য নষ্ট হতে চলেছে। তাই ওয়াইল্ড ট্যুরিজমের এ উদ্যোগের সঙ্গে ঐক্যমত্য পোষন করে আমরাও প্লাস্টিক সংগ্রহের মাধ্যমে দ্বিপটিকে রক্ষার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা এতে আনন্দিত।

অপর শিক্ষার্থী রাফফাতে জান্নাত সিলভী বলেন, “প্লাস্টিক জমা দিন টাকা বুঝে নিন” বিষয়টা মূলত জনসচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে। আমরা অবশ্যই ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশ এর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই৷ পরিবেশ বাচাতে এমন অভিনব উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়৷ আমি এতে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।

এলএলএমের আরেক ছাত্র তারেক মজুমদার বলেন, যেকোন প্রাকৃতিক পরিবেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রাখাটা প্রকৃতি এবং পর্যটন শিল্প, দুইয়ের জন্যেই জরুরি। কিন্তু সমুদ্রে প্রতি মুহুর্তে বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে আমরা একটু একটু করে প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। সৈকতে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের উপস্থিতি আমাদের জানান দেয়, আমরা কতটা অবহেলা করছি প্রকৃতিকে। প্লাস্টিক যেমন দ্বিপের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, তারচেয়ে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের। সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে আমাদের কাছে অতি সাধারণ এক টুকরো প্লাস্টিকের কারণে। আমাদের উচিৎ প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা এবং ব্যবহারের পর প্লাস্টিক যথাস্থানে ফেলতে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা। ওয়াইল্ড ট্যুরিজম সেই কাজটিই করেছে। আমার খুব ভালো লেগেছে। এমন প্রচেষ্টা অব্যহত থাকুক।

উল্লেখ্য, প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়তে জনসচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম পর্যটকদের কাছ থেকে প্লাস্টিক কেনার পদ্ধতি চালু করেছে ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশ। প্লাস্টিকমুক্ত পর্যটন ভাবনার জন্য ইতোমধ্যে অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন ট্যুর গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেফায়েত শাকিল।

Spread the love
%d bloggers like this: