জেলে ও জলকন্যা

ধারাবাহিক রূপকথা : পর্ব-১

জেলে   জলকন্যা

শেখ মনিরুল হক

মূল : অস্কার ওয়াইল্ড

এক জেলে । বয়সে তরুণ । রোজ বিকেলে সমুদ্রে যায়।তারপর মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে জাল ফেলে বসে  থাকে সে। কিন্তু  যেদিন  উথালপাথাল বাতাস সমুদ্রকে অশান্ত করে তোলে সেদিন তার জালে কোন মাছই ধরা পড়ে না । যদিওবা ধরা পড়ে , তা একেবারেই হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র । আর বাতাস যেদিন শান্ত থাকে সেদিন মাছেরা গভীর সমুদ্র্র থেকে  এসে  যেন তার জালের ভেতরে ঢুকে সাঁতার কাটে । তরুণ জেলে তখন মাছেভরা জালটা টেনে  তোলে । তারপর মাছগুলোকে ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে।

এভাবে প্রতিদিন সে সমুদ্রে যায় মাছ ধরার জন্য ।একদিন এক সন্ধ্যায় সমুদ্রে জাল ফেলল সে। কিন্তু জালটা  তোলার সময় এমন ভারি লাগছিল যে, তা টেনে তুলতে  তরুণ জেলের  খুব কষ্ট হচ্ছিল । তরুণ জেলেটি তখন আপন মনে হেসে উঠল এবং বলল , নিশ্চয় আমার জালে সাঁতারকাটা সব মাছই ধরা পড়েছে। কিংবা অদ্ভুত কোন সামুদ্রিকজীব, হতে পারে তা মানুষের  চাইতেও বিচিত্র , কিংবা হতে পারে ভৌতিক কোন কিছু । তরুন জেলে এ কথাও ভাবে, যদি তার জালে এমন সুন্দর জিনিস ধরা পড়ে,যা দেখে রাজ্যে মহারানি খুশি হবেন আর এতে তার ভাগ্য খুলে যাবে।

তরুন মৎস্যশিকারী সর্বশক্তি দিয়ে জাল টানতে থাকে। জালের দড়ি টেনে টেনে সে বাহুতে পেঁচাতে থাকে। তার বাহুর শিরা ফুলে ওঠে। দড়ি টেনে সে জালের বেড় ছোট করে আনে । জালের চক্র ছোট হয়ে ক্রমেই কাছে আসতে থাকে। একসময় জালটাকে সে টেনে তুলতে সক্ষম হয়।কিন্তু জালটাকে তুলে দেখা গেল তাতে আদৌ কোন মাছ নেই, আর না আছে তাতে কোন সাগরদানো বা ভৌতিক কোন কিছু । তবে ছোট্ট একটা মৎস্যকন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল।

মৎস্যকন্যা যখন দেখল যে তার আর পালাবার উপায় নেই তখন সেবলল ,আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, আমাকে ছেড়ে দাও। কেননা …আমার বাবা বৃদ্ধ এবং নি:সঙ্গ। তরুন জেলে বলল,আমাকে কথা দাও,যখন আমি তোমাকে ডাকব তখন তুমি আমার জন্য গান গাবে। তোমার কন্ঠে সমুদ্রের গাঁথা শুনে মাছেমাছে আমার জাল ভরে যাবে। … জেলের ইচ্ছে মতন মৎস্যকন্যাটি রাজি হয় …। তারপর জেলে মৎস্যকন্যাকে বাহু থেকে মুক্ত করে পানিতে ছেড়ে দেয় । মৎস্য কন্যাটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পানিতে ডুব দেয়।…(চলবে)

 

Spread the love
%d bloggers like this: