ডায়নোসর নিয়ে অজানা যত মজার তথ্য

দুরন্তবিডি ডেস্ক:
যুগে যুগে ডায়নোসর এক বিস্ময়ের নাম। মানুষ সৃষ্টিরও মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে তারা। কেমন ছিল দেখতে, কী খেত, তাদের জন্ম কেমন ছিল, কীভাবে বিলুপ্ত হলো সব কিছুই এখনো অমীমাংসিত। কল্পনার জগতে ডায়নোসর এখনো যেন মিথ। বিজ্ঞানীরা কিছু প্রশ্নের সমাধান করতে পেরেছেন, কিছু নিয়ে চলছে বিতর্ক।
ডায়নোসর যে সময়টায় পৃথিবীতে ছিল সে সময়কে বলা হয় মেসোজয়েক যুগ। ২৩০ মিলিয়ন বছর ধরে এই যুগের ৩টি পিরিয়ড জুড়েই ডায়নোসরদের রাজত্ব ছিল। ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের এ যুগের ভাগ ৩টি ছিল ট্রায়াসিক, জুরাসিক এবং ক্রাটাসিয়াস।
ট্রায়াসিক পিরিয়ডের ডায়নোসররা ছিল আকারে অনেক ছোট এবং হালকা ওজনের। বিশাল আকৃতির ডায়নোসর মূলত দেখা যায় জুরাসিক এবং ক্রাটাসিয়াস যুগে।
চীনে ৩৫০০ বছর আগে প্রথম ডায়নোসরের সম্ভাব্য হাড় পাওয়ার রেকর্ড করা হয়। কিš‘ চীনে মানুষের মাঝে তখন ডায়নোসর সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। তাই বিশাল হাড়টি যেটি আসলে ছিল ডায়নোসরের দাঁত। চীনারা ভেবেছিল এটি ড্রাগনের!
ডায়নোসররা পৃথিবীর প্রতিটি এলাকাতেই বাস করত, এমনকি এন্টার্টিকা মহাদেশেও।
মাংসাশী সব ডায়নোসরের হাড় ছিল বাতাসে পরিপূর্ণ। যদিও হাড়গুলো ছিল বিশাল, কিš‘ সেগুলো দেখতে যত ভারী মনে হতো ততো আসলে ছিল না। এজন্যই অনেক ডায়নোসর দৈত্যাকৃতি হওয়া সত্তে¡ও ছিল দ্রæতগামী। পাখিদেরও একই রকম ফাপা হাড় থাকে তাঁদের শরীরে।
আর্গেন্টিনোসরাস প্রজাতির ডায়নোসরেরা ছিল বৃক্ষভোজী। কিš‘ আকৃতিতে ছিল এরাই সবচেয়ে বিশাল। ৯৮ ফুটেরও (৩০ মিটার) বেশি লম্বা হতো এরা।
মাংসাশী ডায়নোসররা থেরপড নামে পরিচিত। এর অর্থ পিশাচের পা। কারণ তাঁদের পায়ে ছিল ধারালো শক্ত থাবা। বৃক্ষভোজী ডায়নোসরদের নখ ছিল তুলনামূলকভাবে ভোঁতা।
কিছু কিছু বৃক্ষভোজী ডায়নোসর প্রতিদিন ১ টনের মতো খাবার দরকার হতো। এটা একটা দ্বীতল বাস সমান সবজির স্তুপ খেয়ে ফেলার মতো।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডায়নোসরদের মধ্যে কয়েক প্রজাতি ছিল শীতল রক্তের, আর কয়েক প্রজাতি ছিল উষ্ণ রক্তের অধিকারী। মজার বিষয় হলো কিছু ডায়নোসর উষ্ণ-শীতল উভয় প্রকারের রক্ত বহন করত শরীরে। ধারণা করা হয়, মাংসাশীরা ছিল উষ্ণ রক্তের আর বৃক্ষভোজীরা ছিল শীতল রক্তের অধিকারী।
এক্সপ্লোরার রয় চ্যাপমেন এন্ড্রিউ প্রথম ডাউনোসরের বাসা খুঁজে পান মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে ১৯২৩ সালে। এই বাসা পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ডায়নোসরের জন্ম সংক্রান্ত কোনো তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না।
ডায়নোসরদের বিলুপ্তির কারণ বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য ধরা হয় মেক্সিকোর ইয়োকাটান উপদ্বীপে একটি বিশাল উল্কাপতনকে। এটি ঘটেছিল ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে। ৬ মাইল ব্যাসার্ধের বিশাল পাথরটি দ্বারা ১১২ মাইল বিস্তৃত একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয়, সেই বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের পর বেঁচে ছিল মাত্র কয়েক প্রজাতির প্রাণী। যেমন- হাঙ্গর, জেলিফিশ, বিচ্ছু, পাখী, পোকামাকড়, সাপ, কপ, টিকটিকি আর কুমির।
ডায়নোসর এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীদের ব্যাপক বিলুপ্তির কারণ ছিল ক্রিটেশাস টারসিয়ারি বিলুপ্তি ইভেন্ট বা কে-টি ইভেন্ট। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে অবশ্য। তবে অনেকেই মনে করেন স্তন্যপায়ীরা এ সময় ডায়নোসরদের ডিম খেয়ে ফেলত যতদিন পর্যন্ত না জনসংখ্যা স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছায়।
পাখী এবং সরীসৃপদের মতো ডায়নোসররা বাসা তৈরি করত, ডিম পারত এমনকি কেউ কেউ তাঁদের শিশুদের খাওয়াত এবং আগলে রাখত।
পাখীদের মলমূত্র ত্যাগ এবং ডিম পাড়ার জন্য শরীরে একটিই পথ রয়েছে। ধারণা করা হয়, ডায়নোসরদের শারীরিক গঠনও ছিল একই। এজন্যই অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন পাখিরা আসলে ডায়নোসরদের পরিবর্তিত প্রজাতি আর এভাবেই টিকে আছে তারা আজও, বিলুপ্ত হয়নি।

সব ডায়নোসররাই ডিম পাড়ত। এখন পর্যন্ত ৪০ প্রজাতির ডায়নোসরের ডিম পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ রিচার্ড অ্যাওন ১৮৪২ সালে এই বিশালকায় জীবের ডায়নোসর নামকরণ করেন। এটি একটি গ্রিক শব্দ। অর্থ ভয়াবহ টিকটিকি।
কিছু কিছু ডায়নোসরের লেজ ছিল ৪৫ ফুট লম্বা। জীবাশ্মবিদদের মতে, এই লম্বা লেজই তাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করত।
বিজ্ঞানীদের মতে, বেশিরভাগ ডায়নোসর আসলে মানুষের সমান আকৃতির ছিল! আমরা বিশাল বিশাল আকৃতির ডায়নোসরের সন্ধান এজন্য বেশি পেয়েছি কারণ এগুলো ফসিল তৈরি হওয়া তুলনামূলক সহজ ছিল।
কলারাডোর আরেক নাম স্টেগসরাস। কারণ স্টেগসরাস প্রজাতির ডায়নোসরের কংকাল প্রথম পাওয়া গিয়েছিল কলারাডোর মরিসনে।
ডায়নোসরদের আয়ু কত বছর ছিল তা এখনো সঠিক জানা যায় না। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, কিছু প্রজাতির ডায়নোসর অন্তত ২০০ বছর বেঁচে থাকত।

Spread the love
%d bloggers like this: