ভুল ও জোড়াতালির বানানে একুশে পদক!

দুরন্ত ডেস্ক: ‘একুশে পদক-২০২০’-এ পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের বাইরে দুটি শব্দ ও দুটি সংখ্যা আছে। এর মধ্যে দুটি শব্দই ভুল বানানে লেখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে একটি বানান সংশোধন করতে জোড়াতালির আশ্রয় নেওয়া হলেও আরেকটি ভুল থেকেই গেছে। আর এই পদকই প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে পদকপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সেদিন কয়েকজন কর্মকর্তার চোখে পড়লেও সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান চলায় কেউ উচ্চবাচ্য করেননি।

এবারের একুশে পদকের ওপর ‘২০২০ খ্রিস্টাব্দ, ১৪২৬ বঙ্গব্দ’ বড়ভাবে লেখা আছে। মাঝে শহীদ মিনারের ছবি। নিচে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। এর নিচে কে কোন ক্ষেত্রে পদক পেয়েছেন সেটি লেখা আছে। বাংলা একাডেমি বানানরীতি অনুযায়ী, সাল লেখা হয় ‘খ্রিষ্টাব্দ’। কিন্তু একুশে পদকে লেখা হয়েছে ‘খ্রিস্টাব্দ’। অন্যদিকে বঙ্গাব্দ শব্দটিও ভুল করে ‘বঙ্গব্দ’ লেখা হয়েছিল। পরে সেখানে জোড়াতালি দিয়ে ‘আকার’ বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কেউই দায়িত্ব স্বীকার করতে রাজি হননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ (বাবাকো) সংক্রান্ত একটি শাখা আছে। এখানে বানানের বিষয়গুলো দেখেন মো. মোস্তফা। তিনি গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বানানরীতি অনুযায়ী খ্রিষ্টাব্দ শব্দটি ষ+ট দিয়ে হবে। খ্রিষ্টাব্দ শব্দটি সংস্কৃত থেকে আত্মীকৃত। তাই বাংলা একাডেমি বানানে ‘ষ্ট’ রাখা হয়েছে। কেউ যদি বিদেশি বানান ধরে ‘স্ট’ লেখেন, সেটা ভুল।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, একাডেমির বানানরীতি অনুযায়ী ষ+ট দিয়ে হবে। তবে একুশে পদকের বানানের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ২১ জনের হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সচিবালয়ে একাধিক কর্মকর্তার কক্ষে এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্য কেউ কেউ পদকের ছবি দেখিয়ে জোড়াতালির বানানটিও দেখান। এরপর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে এবার একুশে পদকপ্রাপ্ত একাধিকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাঁরা নিজেরাও বিষয়টি খেয়াল করেননি বলে জানিয়েছেন। তবে এমন জোড়াতালির কথা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তাঁরা। অবশ্য কেউই নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পদকপ্রাপ্ত একজন এ প্রতিবেদকের কাছে এমন ভুল থাকার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বাসায় ফোন করেন। এরপর এ প্রতিবেদককে বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানলাম, আপনার তথ্য ঠিকই আছে। প্রথমে বানানে ভুল ছিল। পরে আলাদাভাবে বঙ্গাব্দ শব্দে হালকা করে ‘আকার’ যোগ করা হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, একটি জাতীয় পর্যায়ের পদকের ক্ষেত্রে এমন ভুল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা বানানে হয়তো অস্পষ্টতা থাকতে পারে। সেটা পরে ঠিক করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এসংক্রান্ত কমিটি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।’

এরপর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অনুষ্ঠান) ফয়জুর রহমান ফারুকীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘যাঁরা পদক বানান এটা তাঁদের দায়িত্ব। আমি বলতে পারব না।’

পদক বানানোর সঙ্গে যুক্ত যুগ্ম সচিব অসীম কুমার বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল পদকের সোনার ওজন নিশ্চিত করা। আমরা যথাযথ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটা করেছি। বানান দেখার দায়িত্ব আমার না।’
সূএ: দৈনিক কালের কন্ঠ

Spread the love
%d bloggers like this: