শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে

আঞ্জুমান আরা কেয়া:

মায়ের দুধের বিকল্প নেই
শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার শিশুর জন্য প্রয়োজন হয় না। এরপর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিপূরক খাবার খাওয়াতে হবে।
বাড়ন্ত শিশুর খাবার
পড়ন্ত শিশুর বেলায় উন্নত প্রোটিন, আমিষের দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৫ থেকে ২ গ্রাম আমিষ দিতে হবে। ডাল, ছোলা, শিমের বিচি, মটর, চিনাবাদাম, ছোট মাছ এ সময় শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। হাড়ের বৃদ্ধি এবং হাড় মজবুত করতে শিশুকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়াতে হবে। শিশুদের খাবারে ঘি, মাখন, চর্বিও থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং ছোট মাছ এ সময় থেকেই শিশুকে খেতে অভ্যস্ত করতে হবে। চিপস, চকলেট, কেনা জুস প্রভৃতি শিশুদের যতটা সম্ভব কম খাওয়াতে হবে।
স্কুলের টিফিন
দোকানের ভাজা-পোড়া খাবার, বাসি কেক, পেস্ট্রি, কেনা জুস শিশুর টিফিনের জন্য একেবারেই বর্জন করুন। এর পরিবর্তে টাটকা ফল, বাড়িতে তৈরি স্যান্ডউইচ, পাকোরা, পরোটা ইত্যাদি দিন।
প্রতিদিন কতবার খাবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী ৬ মাস বয়সের পর থেকে ৮ মাস পর্যন্ত একটি শিশুকে দিনে অবশ্যই ২-৩ বা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার দিতে হবে। আর তাই ৯ থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে দৈনিক ৩-৪ বার বাড়তি খাবার দিতে হবে এবং প্রতিদিন একই সময় খাওয়াতে হবে। পরে শিশুর বৃদ্ধি অনুযায়ী কি পরিমাণ খাবার কয়বার দিতে হবে তা অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেয়া উচিত।
আদর্শ ওজন
একজন সুস্থ শিশুর ওজন থাকা উচিত ৬ মাস থেকে ১ বছরে ৭ থেকে ১০ কেজি, ২ থেকে ৩ বছরে ১২ থেকে ১৪ কেজি, ৪ থেকে ৫ বছরে ১৬ কেজি থেকে ১৮ কেজি, ৬ থেকে ৭ বছরে ২০ থেকে ২২ কেজি, ৮ থেকে ৯ বছরে ২৫ থেকে ২৬ কেজি, ১০ থেকে ১১ বছরে ৩২ থেকে ৩৫ কেজি। এ ক্ষেত্রে ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুর ওজনে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শিশুর ওজন ৮০ শতাংশের কম হলে মোটামুটি অপুষ্টি আর ৬০ শতাংশের কম হলে মারাত্মক অপুষ্টি শিকার বুঝতে হবে।
বডি মাসাজ
খুব ছোট শিশুদের সুস্থ রাখতে মাসাজ অত্যন্ত উপকারী। রক্ত সঞ্চালন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিপূর্ণ ঘুম, ক্ষুধা বৃদ্ধিসহ নানা উপকারিতা রয়েছে শিশুর বডি ম্যাসাজে। তবে শিশুদের ঝাঁঝালো সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা উচিত নয়। এর বদলে নিয়ম মেনে বাদাম তেল, বেবি বডি ম্যাসাজ জেল দিয়ে আলত করে ম্যাসাজ করুন। খাওয়ার ঠিক আগে বা পরে ম্যাসাজ করা উচিত নয়।
শিশুদের মানসিক বিকাশে
শিশুদের মানসিক বিকাশকেও গুরুত্ব দিন। সবসময় শিশুকে পড়াশোনার জন্য চাপাচাপি না করে অবসর, খেলাধুলার জন্যও কিছ্টুা সময় রাখুন। ছুটির দিনে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে আসুন। শিশুর সঙ্গে সময় কাটান, গল্প কনরুন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করুন।
শিশুর খাবারে নতুনত্ব আনুন
অনেক শিশুর খাবারের প্রতি অনীহা থাকে। এ ক্ষেত্রে খাবারে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করুন। সবজি, মাছ, ফল ইত্যাদি দিয়ে প্রতিদিন একইভাবে খাবার তৈরি না করে একেক দিন একেক ধরনের খাবার তৈরি করুন।
শিশুদের জন্যও যোগব্যায়াম
বড়দের মতো শিশুকে সুস্থ রাখতেও যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। এমন কিছু যোগ ব্যায়াম রয়েছে, যা শিশুদের সুস্থ রাখার পাশাপাশি পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে অভ্যস্ত করুন যোগব্যায়ামেও।
প্রকৃতির কাছে নিয়ে যান
শিশুকে যত প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবেন ততই শিশুর দৃষ্টি এবং মানসিক বিকাশে তা সহায়ক হবে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের এ যুগে এটা আরও বেশি দরকারি। অ্যামেরিকান পেডিয়াট্রিকস অ্যাকাডেমির এক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের অন্তত দু’বছর পর্যন্ত টিভি বা কম্পিউটারের পর্দার সামনে একেবারে নেয়া উচিত নয়।
শিক্ষণীয় খেলনা
শিশুকে আর্কিটেকচার, কিউবিক, পাজেল বক্সসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণীয় খেলনা কিনে দিন। এসব খেলনা শিশুকে খেলতে খেলতে দ্রুত শিখতে এবং আইকিউ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

Spread the love
%d bloggers like this: