ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়

শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে সেই সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে। ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর সেইদিনেই সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারত পালাতে বাধ্য হন।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ইস্যুতে এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সে দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে সে দেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক জারি রাখতে ভারত আগ্রহী। সম্পর্ককে ভারত আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। প্রতিবেশীরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।

জয়শঙ্কর বলেন, ‘প্রতিবেশীরা একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এই সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা আগ্রহী।’

নরেন্দ্র মোদি সরকারের তৃতীয় দফার শাসনের ১০০ দিন অতিক্রান্ত উপলক্ষে জয়শঙ্কর মঙ্গলবার কথা বলেন এনডিটিভির সঙ্গে। সেখানেই পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন। বস্তুত এই প্রথম বাংলাদেশের পালাবদল ও সে দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে সরকারের পক্ষে এত বিস্তারে কেউ মতামত জানালেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ও সেই পরিস্থিতিতে ভারতের কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সব সময় সবকিছু ঠিক থাকবে তা হয় না। সব সময় সবকিছু অনুকূলও থাকে না। বাংলাদেশে যা হয়েছে তা তাদের নিজস্ব রাজনীতি। একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই সেসব নিয়ে মন্তব্য করা অনভিপ্রেত। এটুকু বলতে পারি, আমরা সব সময় বিদ্যমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলি।’

জয়শঙ্কর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ওরা ওদের অবস্থান বুঝে নিলে এবং সম্পর্কের মাহাত্ম্য অনুধাবন করলে প্রতিবেশী সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। প্রতিবেশীরা সব সময় একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্য প্রতিবেশী দেশেও কোথাও কোথাও রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মিটমাট হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও যা হওয়ার তা হবে। সে নিয়ে মন্তব্য করা সাজে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, আমরা তা আমাদের দিক থেকে স্থিতিশীল রাখতে চাই। সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খুব ভালো সহযোগিতা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগও চমৎকার। আমরা এই পথেই এগোতে চাই।’

রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে হাসিনা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে যাবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ হোম অফিস সূত্র এনডিটিভিকে বলেছে, তাদের যে অভিবাসন আইন রয়েছে; সেখানে কোনো ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করে এসে রাজনৈতিক বা সাধারণ আশ্রয় নেওয়ার বিধান নেই।

এর বদলে শেখ হাসিনাকে ভারতেই আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর এরপর থেকে হাসিনা আপাতত চল্লিশ দিনেরও বেশি সময় ধরে ভারতে রয়েছেন এবং সেখানে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত মাসে এস জয়শঙ্কর ভারতীয় পার্লামেন্টকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ‘খুব স্বল্প নোটিশে’ দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে পালানোর অনুমতি চেয়েছিলেন। পার্লামেন্টে সর্বদলীয় ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছিলেন, নিজের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে সময় দিতে চায় ভারত সরকার।

যার মধ্যে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, তার দেশও ভারতের সঙ্গে আগের মতোই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, কিন্তু সেই সম্পর্ক হতে হবে ‘ন্যায্যতা এবং সমতার’ ভিত্তিতে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *