কারো শোকে মাতম করা হারাম

যুবায়ের আহমাদ: 
মুত্যু মানুষের অনিবার্য পরিণতি। সুখে কিংবা দুঃখে যেভাবেই থাকুক না কেন মানুষের জীবনে মুত্যু আসবেই।
একজনের মৃত্যুর পর অন্যদের কর্তব্য হলো কোনো প্রকার বিলাপ বা মাতম না করে তার জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা। এটা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সালাতুল জানাজায় শরিক হয় তবে সে এক কিরাত সওয়াব লাভ করবে। আর যদি কেউ দাফন শেষ হওয়া পর্যন্ত জানাজার সঙ্গে গমন করে ও উপস্থিত থাকে তাহলে সে দুই কিরাত সওয়াব লাভ করবে। আর এক কিরাত হলো বিশাল একটি পাহাড় পরিমাণ। ’ (সহিহ বুখারি : ১/৪৪৫)।

কারো মৃত্যুর পর তার জানাজায় হাজির হওয়া অনেক বড় সওয়াবের কাজ। অন্যদিকে কারো মৃত্যুতে মাতম বা বিলাপ করা, বুকে পিঠে আঘাত করে শোক প্রকাশ করা চরম অন্যায় ও গুনাহের কাজ। ইসলামের দৃষ্টিতে কারো মৃত্যুতে মাতম করা, গালে-মুখে থাপ্পড় মেরে কাঁদা, বিলাপ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।
নবীজি (সা.) মাতম করাকে জাহিলিয়াতের নিন্দনীয় স্বভাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মাতম করা কুফুরির পর্যায়ের অন্যায়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দুটি চরিত্র কুফুরির পর্যায়ের। একটি হলো বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা আর অপরটি হলো কোনো মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বিলাপ করা। ’ (মুসলিম : ৬৭)। তাই তো যে ব্যক্তি এমন করে তাকে নবীজির (সা.) উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিড়ে ফেলে ও জাহিলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহবান করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। ’ (সহিহ বুখারি : ১২৯৪)।

মাতমকারীর ওপর লা’নত বর্ষিত হয়। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুখমণ্ডল ক্ষত- বিক্ষতকারিনী, পকেট বিদীর্ণকারী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারীণীর ওপর লা’নত করেছেন। ’ (ইবনে মাজা : ১৫৮৫)। এমন ব্যক্তি যে কি-না কারও মৃত্যুতে মাতম করেছে সে যদি তার এ কাজের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা না করে মারা যায় তাহলে পরকালে তাকে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে কিয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার পাজামা ও খোস- পাঁচড়ার ঢাল পরিহিতা অবস্থায় দাঁড় করানো হবে। ’ (সহিহ মুসলিম : ৯৩৪)।

বিলাপ বা মাতম করা তো দূরের কথা কারো জন্য অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করাও হারাম। এমনকি নবীজি (সা.) এর মৃত্যুতেও শোক পালনের সুযোগ নেই। হজরত হাফসা বিনতে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান রাখে, তার জন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালনের অনুমোদন নেই। তবে স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশদিন শোক পালন করতে পারবে। (নাসায়ী : ৩৫০৩)। যে ব্যক্তির মৃত্যুতে বিলাপ বা মাতম করা হয় তার জন্যও বিষয়টি কোনো উপকার বয়ে আনে না। বরং তার জন্যও ব্যাপারটি কষ্টের কারণ হয়। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে তার কবরের মধ্যে তার জন্য মাতম করে কান্না করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়। ’ (সহিহ বুখারি : ১২৮৮)। অর্থাৎ সে ব্যক্তি তার উত্তরসূরীদের এহেন কাজের জন্য কবরে থেকে কষ্ট পান। তাই আমাদের উচিত মানুষের মৃত্যুতে শোক পালনের এ অন্যায় পদ্ধতি বর্জন করা।

লেখক : জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ক্বারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপু

Spread the love