নামের বিড়ম্বনা!

দুরন্ত খবর ডেস্ক:
বছরখানেক আগে ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের এক অখ্যাত ‘মার্ক জাকারবার্গ’ রাতারাতি তারকা বনে যান। কোনো কিছু কেনাকাটার জন্য যখন তিনি তার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন কিংবা ব্যক্তিগত কাজে যখন কোনো রেস্টুরেন্ট রিজার্ভ করতেন, তখন কাউন্টার থেকে বড়বড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলত, তুমি সত্যিই জাকারবার্গ?
নিজের নাম নিয়ে মানুষের এমন কৌতূহল জাকারবার্গকে বিব্রত করত। একবার দুইবার তিনবার নাম বলার পরও মানুষের কৌতূহল যেন থামেই না! সবার চোখে একটাই জিজ্ঞাসা, তুমি সত্যি মার্ক জাকারবার্গ তো! বিরক্ত হয়ে জাকারবার্গকে উত্তর দিতে হতো, ‘হ্যাঁ, আমি মার্ক জাকারবার্গ না তো কে?’
বিব্রত হবেন না, যে জাকারবার্গের কথা বলছি, তিনি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নন। এই ‘মার্ক জাকারবার্গ’ (৫৩) থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে এবং দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় যুক্ত। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার মামলায় তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের মামলায় লড়ছেন তিনি।
ফেসবুক প্রতিষ্ঠারও প্রায় দুই দশক আগে থেকে ইন্ডিয়ানায় আইন পেশার সাথে যুক্ত এই জাকারবার্গ। এ রাজ্যে তার ব্যাপক পরিচিতিও আছে। কিন্তু ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গের বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কাছে অবশ্য সে পরিচিতি নস্যি। ২০১১ সালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল, এ জাকারবার্গ আসল জাকারবার্গের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। পরে বাধ্য হয়ে `AmMarkZuckerberg.com’  নামে একটি ডোমেইন কেনেন। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া ও মূলধারার মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা পায় ঘটনা। সবাই জেনে গেল, কীভাবে জুনিয়র জাকারবার্গের কারণে বিব্রত হচ্ছেন সিনিয়র জাকারবার্গ!
আক্ষেপ করে সিনিয়র জাকারবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘২০০৪ সাল পর্যন্ত গুগলে কেউ মার্ক জাকারবার্গ লিখে সার্চ দিলে আমাকেই পেত। অন্য কোনো জাকারবার্গের অস্তিত্ব তখনো ছিল না। তার দুই বছর যেতে না যেতেই একই নামে সার্চ দিলে আমাকে আর পাওয়া যায় না।’
জাকারবার্গের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এক পর্যায়ে `AmMarkZuckerberg.com’  নামের একটি ওয়েবসাইট দাবি করে বসলো, যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র একজনই মার্ক জাকারবার্গ আছেন, আর তিনি হচ্ছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা।
কিন্তু তার এ বিব্রতকর দিনগুলো মুহূর্তেই অন্য মাত্রা পেল, যখন ‘দ্য সোশাল নেটওয়ার্ক’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেল। যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাকারবার্গ’ নামটি সাধারণত কেউ রাখে না। মানুষজন ভাবতে লাগলেন এ মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের বড় ভাই! তখন রাতারাতি জনপ্রিয়তা বেড়ে গেল তার। মানুষ দেখলেই অতি উৎসাহ দেখাত, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সম্মান, আপ্যায়ন করত।
বছরখানেক বা তারও কিছু আগের কথা। ফ্লোরিডার নেপলসের একটি রেস্টুরেন্ট বুকিং দিতে গিয়েছিলেন সিনিয়র জাকারবার্গ। সেখানে তাকে সিলিকন ভ্যালির তারকাদের মতো সম্মান দেয়া হলো। রেস্টুরেন্টের অন্যান্য মানুষজন লবিতে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি যখন সেখানে পৌঁছলেন, রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক স্বয়ং ফটকে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। তাকে সবচেয়ে সুন্দর টেবিলে বসানো হলো আর দামি শ্যাম্পেন দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো।

Spread the love