আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই প্রকাশ হতে যাচ্ছে এইচএসসির ফল
অতীতের মতো এবার এইচএসসির ফল প্রকাশে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি সোমবার বলেন, “মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজেদের অফিসে বসে ফল প্রকাশ করবেন।”
এর আগে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতেন সরকারপ্রধান। তার হাতে ফল তুলে দিতেন বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন।
সরকারপ্রধানের আনুষ্ঠানিকতা সারার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ওয়েবসাইট ও মোবাইলে ফল জানার সুযোগ মিলত।
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, “এবার ওরকম ব্রিফ থাকবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা পরিসংখ্যান নিয়ে যেতে পারবেন।
“আনুষ্ঠানিকতা বলতে আগের মতো কিছু হবে না; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কিছু হবে না, কোথাও কোনো কিছু হবে না। সাংবাদিকদের পরিসংখ্যান দিয়ে দেবো আমরা (বোর্ড প্রধান)।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার ফল কীভাবে প্রকাশ করা হবে তা ঠিক করতে সময় লেগে যাওয়ায় এতোদিন ফল প্রকাশ হয়নি। সাড়ে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে মঙ্গলবার।
ফল কীভাবে হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে এর আগে অধ্যাপক তপন বলেছিলেন, “যে কয়টা বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে হবে। যেগুলোর পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর এসএসসিতে যে নম্বর পেয়েছে- সেটাই সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।”
যেভাবে জানা যাবে ফল
অন্যান্যবারের মত এবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটের পাশাপাশি যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে উচ্চমাধ্যমিকের ফল জানা যাবে।
ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইট (www.dhakaeducationboard.gov.bd) ও বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইটে (www.educationboardresults.gov.bd) ঢুকে রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি সেরে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফলাফল নামানো যাবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর টাইপ করে ফল জানতে পারবে।
ফল প্রকাশের পর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও তা জানা যাবে।
এইচএসসির ফল জানতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2024 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে আসবে ফল।
পরীক্ষা হয়েছে ৭ বিষয়ে
ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরের ঘটনাপ্রবাহে এবার উচ্চ মাধ্যমিকের সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। ১১ বোর্ডের অধীনে এবার প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে।
এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ১ অগাস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ অগাস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়।
বারবার স্থগিতের পর ১১ অগাস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরে স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
পরে অন্তর্বর্তী সরকার তা আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু ২০ অগাস্ট পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি তোলে। পরে সেদিনই সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো না নেওয়ার ঘোষণা দেয়।