বস্তির ৮০ ভাগ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার
রাজধানীর বস্তিতে বসবাসকারী কন্যাশিশুদের ৮০ ভাগ বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। বালকদের মধ্যে এই হার শতকরা ৪৬ ভাগ।
অভিভাবকদের শতকরা ৫২ ভাগ ভালো পাত্র, ২০ ভাগ দরিদ্রতা ও ১৯ ভাগ যৌন হয়রানি শিকার হওয়াকে বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন।
বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের উপর পরিচালিত ‘নগরায়ণের প্রবণতা ও শিশুদের উপর প্রভাব’ এবং ‘রাজধানীর নির্বাচিত পাঁচটি বস্তির অবস্থা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক দুটি গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গবেষণা দু’টি পরিচালনা করে। সেন্টার ফর আরবান স্টাডি এবং দ্য নিলসন কোম্পানী বাংলাদেশ এই গবেষণা কর্ম দু’টি সম্পাদনা করে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর স্প্রেকটা কনভেনশন সেন্টারে গবেষণা প্রতিবেদন দুটি উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ আরবান ফোরামের (বিইউএফ) ন্যাশনাল পলিসি অ্যাডভাইজার মি. মোস্তফা কাইয়ুম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভিডিওর মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. মাইকেল ম্যাকগ্রাথ। বক্তব্য রাখেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি-ডিরেক্টর কাজী গিয়াস উদ্দিন, এডুকেশন ডিরেক্টর এলিজাবেথ পিয়ার্স প্রমূখ।
‘নগরায়নের প্রবণতা ও শিশুদের উপর প্রভাব’ গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন দ্য নিয়েলসন এর ম্যানেজার একেএম ফজলুর রহমান ‘রাজধানীর নির্বাচিত পাঁচটি বস্তির অবস্থা বিশ্লেষণ’ গবেষণা প্রতিবেনটি উপস্থাপন করেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের শিশুদের জন্য প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ডা. শাহানা নাজনীন।
বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলো কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় এবং এসব পরিবারের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো কী কী কাজ করেছে তা এই গবেষণা দু’টিতে উঠে এসেছে।
‘নগরায়নের প্রবণতা ও শিশুদের উপর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের ৪৪ শতাংশ পোশাক কারখানা, ২৪ শতাংশ বিভিন্ন দোকান ও ৯ শতাংশ ভিক্ষা বৃত্তির কাজে জড়িত। কর্মজীবী শিশুদের মধ্যে ৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনে শিকার এবং ১২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে।
এছাড়া কর্মজীবী শিশুদের ১১ শতাংশ দৈনিক ১৩ থেকে ১৫ ঘন্টা, ৪০ শতাংশ ১১ থেকে ১২ ঘন্টা ও ৩২ শতাংশ ৯ থেকে ১০ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
২০০৪ সাল থেকে সরকার জন্ম সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে। এই জন্ম সনদ নেওয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে বস্তির শিশুরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে ২৭ শতাংশ টাকা খরচের ভয়ে জš§ সনদ নেয় না। আবার যে সকল শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করা হয় না, তাদের অভিভাবকদের ৪১ শতাংশ বিষয়টির গুরুত্ব বোঝেন না এবং ৩২ শতাংশ জানেন না কিভাবে নিবন্ধন করা হয়।
তবে শিক্ষাক্ষেত্রে বস্তির কন্যাশিশুরা বালকদের তুলনায় শিক্ষায় এগিয়ে আছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কন্যাশিশুদের ৪৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। যাদের ৪৩ শতাংশ নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। অন্যদিকে, বালকদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। যাদের ৩১ শতাংশ নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে।
বস্তির শিশুদের কার্যক্রমে সরকারের চেয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গবেষণায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে। বস্তিবাসীর পানি ও পয়ঃনিস্কাশনে এনজিওগুলো উল্লেখ করার মতো ভূমিকা পালন করে আসছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তিবাসীর জন্য পানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের চেয়ে এনজিওগুলো এগিয়ে। সরকার যেখানে বস্তিবাসীদের জন্য মাত্র ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ পানি সরবরাহ করে থাকে, সেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর অবদান হচ্ছে ৭৫ দশমিক ৭১ ভাগ।
পয়ঃনিস্কাশন প্রণালীতেও সরকারের ভূমিকা অতি নগণ্য। এ খাতে সরকারের অবদান মাত্র ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে এনজিওগুলো ৯৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ পয়ঃনিস্কাশন সেবা দিয়ে থাকে।
গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বস্তিতে বসবাসকারী কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহ রোধে নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নারী শিক্ষার উন্নয়নে অভিভাবকদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি ও সহযোগী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।