মাশরাফির অধিনায়কত্বের ৫০বছর

দুরন্ত ডেস্ক:

২০০১ সাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে চিরদিন মনে রাখার এক বছর। সে বছরের ৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক ‘সুপারস্টারে’র। শুরুতেই বোঝা গিয়েছিল, এই তারকার হাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগামী দিনগুলো। পরের সময়ের চিত্রনাট্য ভাবনার প্রত্যাশার সঙ্গেই মিলে গেল। নিজের গুণেই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতীক।

মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাই হচ্ছে। এ দেশের ক্রিকেটের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠা সেই মাশরাফিই আজ ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশকে নেতৃত্ব দিতে নামবেন ৫০তম ওয়ানডেতে। একটা বিশেষ মাইলফলক তো বটেই; উদ্‌যাপনেরও দারুণ একটা উপলক্ষ। কিন্তু সেই উদ্‌যাপন বহুগুণ আনন্দময় হবে, যদি আজকের ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে পারে। দলের অন্য সবাই কি এটি নিয়ে ভাবছেন? তাঁরা কি ভাবছেন নিজেদের সেরা খেলাটা দিয়ে মাশরাফির অধিনায়কত্বের ৫০তম ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে?

প্রায় সবারই আফসোস হতে পারে মাশরাফির অধিনায়কত্বের সংখ্যাটির দিকে তাকালে। ওয়ানডে নেতৃত্বে সবে ‘ফিফটি’ স্পর্শ করবেন তিনি? এর উত্তর দিতে গেলে তো হাহাকারে ডুবে যেতে হয়। আজ থেকে ৮ বছর আগেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মাশরাফি। ২০০৯ সালে সব সংস্করণেই নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘মন্দ কপাল’, সেই গৌরবটা ঠিকমতো উদ্‌যাপন করতে দেয়নি তাঁকে। চোটে জর্জর হয়ে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যেতে হয় তাঁকে। সেই সময় থেকে অধিনায়কত্ব করলে ৬০ কেন, এত দিনে হয়তো অধিনায়কত্বের শততম ম্যাচ উদ্‌যাপন করা হয়ে যেত মাশরাফির। দুই হাঁটুর চোট মিলিয়ে যিনি মাঠের বাইরেই ছিলেন বেশির ভাগ সময়। কিন্তু বারবার ফিরে এসেছেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল ভুলে যাওয়ার মতোই। সে বছরের শেষ দিকেই পরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মাশরাফির হাতে তুলে দেওয়া হলো নেতৃত্ব। সে যেন বাংলাদেশ ও মাশরাফির নবজন্ম। তাঁর নেতৃত্বের জাদুকরি স্পর্শে বাংলাদেশ এখন আর শুধু ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’ জন্য মাঠে নামে না; ঘরে হোক আর বাইরে, প্রতিটি ম্যাচেই দলের লক্ষ্য থাকে একটিই—জয়, জয় এবং জয়!

অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সেরা অর্জন কোনটা—এটা বিচার করতে গিয়ে একটু সমস্যাতেই পড়তে হয়। তবে প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বিচারে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের সেরা ৮-এ তুলে ক্রিকেটের ‘এলিট’ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যোগ্যতা অর্জনও বড় সাফল্য তাঁর। আর এ বছর জুনে সেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই সেমিফাইনালে খেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সমীহ করার শক্তি হিসেবেই।

এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জয় দেশের ক্রিকেটের বড় অর্জন। সে অর্জন তো মাশরাফির হাত ধরেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার সব ব্যবস্থাই মাশরাফি করে রেখেছেন ৩৫ বছর বয়সেই।

Spread the love
%d bloggers like this: