শরীয়তপুরে ভাঙনে আটটি বিদ্যালয় বিলীন,হুমকিতে আরও ছয়টি

প্রতিনিধি: পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরে আটটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক মাসের ভাঙনে জাজিরার চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নড়িয়ার দুটি ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে, বাড়ির উঠানে, ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোতে গত জুন মাস থেকে ভাঙন শুরু হয়। এতে এখানকার বিদ্যালয়গুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো জাজিরা উপজেলার ইয়াকুব মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরত খাঁ’রকান্দি জগৎ জননী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালু ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালু ব্যাপারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাথালিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নড়িয়া উপজেলার শেহের আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরেশ্বর উচ্চবিদ্যালয় ও স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জাজিরার কাজিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাহেদ আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত বৃহস্পতিবার নড়িয়া উপজেলার শেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। ভবনটি ভেঙে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রামের একটি মসজিদের পাশে টিনের একটি কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই স্থানও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি এম সেকান্দার আলী বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদী ছিল। দুই মাসের ভয়াবহ ভাঙনে বিদ্যালয়টি চলে গেল। চোখের সামনে বিদ্যালয়ের জায়গা-মাঠ বিলীন হয়ে গেল। ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পাশের একটি ঘরে শিশুদের পরীক্ষা নিচ্ছি। ওই ঘরটিও যেকোনো সময় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর পরে আমরা কোথায় আশ্রয় নেব আল্লাহই জানেন।’

জাজিরা উপজেলার পাথালিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম বলেন, বিদ্যালয়টি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল, চেয়ে চেয়ে দেখলাম আর চোখের পানি ফেললাম। গ্রামের একটি রাস্তার পাশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার ভায়াবহ ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়গুলো বিলীন হয়ে গেল। ওই বিদ্যালয়গুলোকে কোথায় স্থাপন করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ভাঙনের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। ভাঙনের শিকার হয়ে গ্রামের মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।’

কালু ব্যাপারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সুরুজ মিয়া বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের তিনটি ভবন, মাঠ পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আমরা কিছু আসবাবপত্র সরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। ২৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এখন একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও মাঠে আশ্রয় নিয়েছি।’

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ের জন্য দ্রুত যাতে ঘর নির্মাণ করা হয়, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ‘ভাঙনের শিকার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যাতে কোনো বিঘ্ন না হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে স্থানীয়ভাবে জায়গার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আমরা তাঁদের ঘর নির্মাণে সহায়তা করব।’

Spread the love
%d bloggers like this: