৩০ লাখ শহীদের স্মরণে সারা দেশে চলছে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত বুধবার জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৮ উদ্বোধন করেন তিনি। এ বছরই প্রথম জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৮-এর এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে।

প্লাস্টিককে বিশ্বব্যাপী সমস্যা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন, এখন পাটের পলিমার থেকে যেটা পচনশীল, সেই ধরনের ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। আমরা এটার নাম দিয়েছি ‘সোনালি ব্যাগ’। এই সোনালি ব্যাগ পরিবেশ দূষণ করবে না। পাটকে তার সোনালি দিনে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ যেমন নিয়েছি, সেই সঙ্গে এই আবিষ্কারটাও করা হয়েছে এবং পাটের ওপর গবেষণা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি এই সোনালি ব্যাগটা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া পাটের ছোট ছোট থলে, ব্যাগ এগুলোও ব্যবহার করা যায়। এমনকি ফ্যাশনের জন্যও ব্যবহার করা যায়। আমি যে ব্যাগটা (হ্যান্ডব্যাগ) ব্যবহার করছি, সেটা কিন্তু পাটের তৈরি ব্যাগ।

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার করি, আর যদি তা না পারি তাহলে বর্জন করি।’ সারা বিশ্বেই প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে পাট।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সামাজিক বনায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে নারীর ক্ষমতায়ন, নেতৃত্ব সৃষ্টি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ‘সামাজিক বনায়নের আওতায় ১৯৮১-৮২ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর এবং ৬৮ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার ভূমিতে বাগান করা হয়েছে। এই বাগানে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৫ জন উপকারভোগী সম্পৃক্ত রয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৫০৭ জন।’ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এ পর্যন্ত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ প্রায় ৩৩১ কোটি ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৬ টাকা বলে জানান শেখ হাসিনা।

বনভূমি সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং বনভূমি সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। একদিকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে; অন্যদিকে বৃক্ষরোপণ ও বনাঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমে বিরূপ আবহাওয়া মোকাবিলা এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের অপচনশীলতার জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানগুলো চলাচলে বাধা দিয়ে মাটির গুণগত মান হ্রাস করে। প্লাস্টিক দূষণ বর্ষাকালে শহরগুলোয় নর্দমা এবং খালসমূহে পানি প্রবাহে বাধার ফলে মাত্রাতিরিক্ত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।

পাটের তৈরি বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকার বিকল্প হিসেবে কাগজ এবং পাটের তৈরি বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে।

‘দেশীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত পাটের পলিমার থেকে প্রস্তুত পচনশীল সোনালি ব্যাগ বর্তমানে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে আমাদের তেমন ভূমিকা নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

পরিবেশ রক্ষায় অনুষ্ঠানে সবাইকে বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আসুন, আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করি এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ নির্মাণে এগিয়ে যাই।

Spread the love
%d bloggers like this: