ইরানি প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ও কতিপয় জ্বলন্ত প্রশ্ন??

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ১০ ঘন্টা পর ইরানের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করছে যে, তারা প্রেসিডেন্টকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারের অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে। এই মর্মে তারা বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে। হেলিকপ্টারটি পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভারজিঘান এলাকার একটি পাহাড়ি ঢালে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে তৃতীয় পূর্বে এ ধরনের যে সমস্ত খবর বেরিয়েছিল তার সবগুলোই পরবর্তীকালে বাতিল করা হয়েছিল। ওই হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজার বাইজানের গভর্নর মালেক রাহমাতি ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পূর্ব আজারবাইজান বিষয়ক প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদসহ অন্যান্য যাত্রীরা ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযানে ইরান সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী স্পেশাল ফোর্স এবং বিপুল সংখ্যক ড্রোন এই অভিযানে ইতিমধ্যেই সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়াও তুরস্ক তাদের অত্যাধুনিক আকঞ্জি ড্রোন সহায়তার জন্য পাঠিয়েছে। রাশিয়া দুইটি বিমান হেলিকপ্টার ও ৫০ জন বিশেষ ফোর্স এই সহায়তার জন্য প্রেরণ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো তাদের স্যাটেলাইট ইমেজিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা করছে। এতকিছুর পরও এখন পর্যন্ত হেলিকপ্টার বা প্রেসিডেন্টের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি সর্বশেষ খবরে তুরস্কের আকিঞ্জি ড্রোন যে ফার্মাল ইমেজ আইডেন্টিফাই করেছিল সেখানে ইরানের উদ্ধারকারী দল পৌঁছে কোন কিছু খুঁজে পায়নি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ ও সেখান থেকে পাওয়া সিগনাল, ফোন কল প্রভৃতি বিষয়ে যে সমস্ত খবর বেরিয়েছিল সেগুলো পরবর্তীকালে নাকচ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সে দেশের জনগণকে শান্ত ও ধৈর্য ধরে থাকার জন্য এবং একই সাথে প্রেসিডেন্টের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এই ঘটনা আমার মধ্যে কিছু কৌতূহল ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা হেলিকপ্টার কোন সাধারণ পরিবহন নয় এবং এর যাত্রীও কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। সেক্ষেত্রে এই যাত্রায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সর্তকতা অবশ্যই ইরান গ্রহণ করেছিল। তাহলে কিছু প্রশ্ন থাকে:
১. আবহাওয়া খারাপ থাকলে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করার কথা নয়, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার।
২. যাত্রা পথে খুব বেশি কুয়াশা থাকলে রাডার তা সনাক্ত করে হেলিকপ্টারকে সংকেত দেয়ার কথা এবং সেক্ষেত্রে হেলিকপ্টার উন্নয়নের কন্ট্রোল টাওয়ার এর ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ার কথা অথবা ঘটনাটি তাৎক্ষণিক হলে কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশে হেলিকপ্টার পথ পরিবর্তন করে কেন যায়নি?
৩. একই এলাকায় একই আবহাওয়ায় অন্য দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে চলে আসতে পারলে এই হেলিকপ্টারটি কেন পারল না? প্রেসিডেন্টের বহনকারী হেলিকপ্টার আরো উন্নত এবং আধুনিক প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত হওয়ার কথা।
৪. তার বিমানটি বিপদে পড়ার পর বাকিগুলো উদ্ধার না করে ফিরে আসলো কী করে? প্রেসিডেন্ট বিষয়টা তো সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি। ঠিক ওখানেই ল্যান্ড করতে না পারলে সবচেয়ে কাছাকাছি ল্যান্ড করে তাদেরই সর্বাগ্রে সেখানে পৌছানোর কথা।
৫. উড্ডয়নরত অবস্থায় একটি হেলিকপ্টার সবসময়ই কোন একটি কন্ট্রোল টাওয়ার এর সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রেসিডেন্টের বহনকারী হেলিকপ্টার অবশ্যই সে রকম কোন কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে সংযুক্ত ছিল। সেক্ষেত্রে হেলিকপ্টারটি খারাপ আবহাওয়া জনিত পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পর কন্ট্রোল টাওয়ারকে সিগনাল দেয়ার কথা, এবং তাদের বিপদ ও সমস্যাগুলো প্রতিমুহূর্তে কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানানোর কথা। এছাড়াও বিধ্বস্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ককপিটে পাইলটের কথোপকথন এবং হেলিকপ্টারের ভেতরে যাত্রীদের কথোপকথন কন্ট্রোল টাওয়ারের রিসিভ করার কথা। কিন্তু ইরানের কর্তৃপক্ষ কন্ট্রোল টাওয়ার সূত্রে এধরনের কোন খবরই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি।
৬. এছাড়াও পাইলট ও কন্ট্রোল টাওয়ারের কথোপকথনের সূত্র ধরে এটা যদি আবহাওয়া জনিত কোন দুর্ঘটনা হতো তাহলেও সেটা নিশ্চিত করে বলার কথা। কিন্তু ইরানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলছে না যে এটি আবহাওয়া জনিত দুর্ঘটনা।
৬. এছাড়াও যে দুইটি হেলিকপ্টার অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছে তাদেরও দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত খবর দেয়ার কথা কিন্তু সেই সূত্রেও কোন খবর দেয়া হচ্ছে না।
৭. হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলেও বিধ্বস্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে যোগাযোগের সিগনালের সূত্র ধরে, হেলিকপ্টারে থাকা জিপিএস সিস্টেমের সূত্রে, যাত্রীদের মোবাইলের সিগন্যালের সূত্রে, ব্ল্যাকবক্স সিগন্যালের সূত্রে এর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার কথা। এই সিগনালগুলোর সবটা কুয়াশা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা নয়।
৮. এখন পর্যন্ত ইরান এই দুর্ঘটনার কারণ নাশকতা এমন কোন বিবৃতি প্রদান করেনি। বা এই দুর্ঘটনার পেছনে ইসরাইলের কোন ভূমিকা রয়েছে এমন অভিযোগও করেনি। অথচ ইসরাইল আগ বাড়িয়ে এই দুর্ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়, এমন সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছে। এটা কারো কারো কাছে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে- আমি কলা খাই না’ প্রবাদের মত মনে হতে পারে।
৯. এই দুর্ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ছুটি সংক্ষিপ্ত করে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসে জরুরী বৈঠক করেছেন ইরান পরিস্থিতি নিয়ে। জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কানাঘুষা শুরু হয়েছে।
১০. প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় থাকা অথবা তার সহযোগী যে দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে ফিরে এসেছে সেগুলোর অবশ্যই জানার কথা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার নির্দিষ্ট ভাবে কোন জায়গায় দুর্ঘটনায় পড়েছে।
১১. এই ঘটনায় ইরানে অবস্থানকারী অন্য একটি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার কিছু অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে সে বিষয়টিও গুরুতর।
— এরকম আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ফলে নানা ধরনের গুজব সন্দেহ ডালপালা বিস্তার করেছে। হেলিকপ্টারটি উদ্ধারের পরে হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়তো পরবর্তীকালে পাওয়া যাবে আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো অনেক দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। যাইহোক মহান আল্লাহ প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সফর সঙ্গীদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিন এই দোয়া করছি।
Spread the love