প্রতিবছরই বাড়ছে এভারেস্টের উচ্চতা

গত ৮৯ হাজার বছরে এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ১৫ থেকে ৫০ মিটার, যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পর্বতশৃঙ্গটি থেকে পানি প্রবাহ ব্যবস্থার সঙ্গে একটি নদীর সংশ্লিষ্টতার ফলে এমনটি ঘটছে।

এক্ষেত্রে অরুণ নদী নিকটবর্তী আরেক নদীর সঙ্গে গিয়ে মেশে, যার নতুন পথ থেকে তৈরি হয়েছে গভীর অরুণ গিরিখাত, যেটি এভারেস্টের খুবই কাছাকাছি।

এভারেস্ট থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরের এ নদীর নেটওয়ার্ক ওই গিরিখাত ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে পর্বতশৃঙ্গটির উচ্চতা প্রতি বছর দুই মিলিমিটার করে বাড়ছে।

“মাউন্ট এভারেস্ট আসলে বড় এক পৌরাণিক গল্পের পর্বত, যা এখনও বেড়েই চলেছে,” বলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএল)’-এর ‘আর্থ সায়েন্সেস’ বিভাগের শিক্ষার্থী ও এ গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক অ্যাডাম স্মিথ।

“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, নিকটবর্তী এ নদী ব্যবস্থা যতটা গভীরে যাচ্ছে, ততই বিভিন্ন উপাদান শ্রোতে ধুয়ে যাচ্ছে আর এর ফলে অনেকটা স্প্রিংয়ের ওপর চাপ কমে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে এবং পর্বতশৃঙ্গটির উচ্চতা আরও বাড়ছে।”

এভারেস্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ, যার উচ্চতা আট হাজার আটশ ৪৯ মিটার, যেখানে হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের চেয়ে এর উচ্চতা প্রায় আড়াইশ মিটার বেশি।

এখন অরুণ নদী ও এর থেকে তৈরি গিরিখাত পূর্ব এভারেস্টের মধ্য দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে এর চেয়েও বড় কোশি নদী ব্যবস্থার সঙ্গে গিয়ে মেশে।

এভারেস্টের বিখ্যাত বেস ক্যাম্পে অভিযাত্রীরা প্রায়ই তাদের রুটে কোশির কিছু অংশ অতিক্রম করে থাকেন।

সহস্রাব্দ ধরে, অরুণ নদী এর তীরের কোটি কোটি টন মাটি ও পলিতে ভাঙন ধরিয়ে গভীর খাদ তৈরি করেছে।

এই বিপুল পরিমাণ পলিল সরে যাওয়ায় সেখানকার মাটির ওজন হালকা হয়ে গেছে, যার ফলে ভূপৃষ্ঠ ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছে। এভারেস্টের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ‘আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড’ নামের একটি প্রক্রিয়া কাজ করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছেন এ গবেষণার লেখকরা।

ওই এলাকার ভূত্বকের নিচে উর্ধ্বমুখী চাপের পরিমাণ এখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির চেয়ে কিছুটা বেশি।

প্রতিবেদনটির সহ-লেখক ও ড. জিন-জেন দাই’র মতে, এভারেস্টের বিশাল উচ্চতা থেকেই সে এলাকায় এ ‘চমকপ্রদ’ নদী ব্যবস্থা গঠিত হয়েছে।

“উজানের দিকে প্রবাহমান অরুণ নদী একটি সমতল উপত্যকা দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে, যার উচ্চতা অনেক বেশি,” বলেন তিনি।

“পরবর্তীতে এটি হঠাৎ করে মোড় পাল্টে দক্ষিণে কোশি নদী হিসেবে প্রবাহিত হয়, যার ফলে এর উচ্চতা কমে আসার পাশাপাশি এর গতিপথও আগের চেয়ে খাড়া হয়ে ওঠে।”

“এ বিশেষ ধরনের টপোগ্রাফি এমন এক অস্থির পরিস্থিতি নির্দেশ করে, যার সম্ভাব্য যোগসূত্র আছে এভারেস্টের বিশাল উচ্চতার সঙ্গে।”

এ উচ্চতা বৃদ্ধির ঘটনা স্রেফ এভারেস্টের বেলাতেই ঘটে, বিষয়টি এমন নয়। বরং ‘এলহটসে’ ও ‘মাকালু’র মতো আশপাশের পর্বতেও এর প্রভাব দেখা যায়, যেগুলো যথাক্রমে বিশ্বের চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ।

Spread the love