তাপসের ভাত আনতে ৫১ মাসে ব্যয় ২৮ লাখ টাকা

তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন ৫১ মাস। সে হিসাবে শুধু দুপুরের খাবার আনার জন্য গাড়ির জ্বালানি বাবদ সিটি করপোরেশনের ব্যয় ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর যে গাড়িতে দুপুরে ভাত আনা হতো, সেই গাড়ি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হতো না।

বনানীর বাসা থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসের জন্য প্রতিদিন দুপুরে খাবার আনতে যেত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি গাড়ি। শুধু এ কাজের জন্য করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের একজন চালক নিয়োজিত ছিলেন। বনানী থেকে ফুলবাড়িয়ায় দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে টিফিন বক্সে করে খাবার আনতে ওই গাড়ির জন্য দিনে ২০ লিটার জ্বালানি তেল (অকটেন) বরাদ্দ ছিল।

এখন এক লিটার অকটেনের দাম ১২৫ টাকা। সে হিসাবে তাপসের বাসা থেকে দুপুরের খাবার আনার পেছনে দিনে ব্যয় হতো ২ হাজার ৫০০ টাকা। তাপসের খাবার আনার কাজে ব্যবহৃত ওই গাড়ির (সেডান কার) জন্য শুক্র ও শনিবার ছাড়া মাসে বরাদ্দ ছিল ৪৪০ লিটার অকটেন। সব মিলিয়ে গাড়ির পেছনে জ্বালানি বাবদ মাসে খরচ হতো ৫৫ হাজার টাকা, যা বছরে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

খাবারের ওই গাড়ির বাইরে তাপস নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য সিটি করপোরেশনের তিনটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া বিধি ভেঙে তাঁর দপ্তরের দুই কর্মকর্তাকেও (দুজনই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা) গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত একজন কর্মীকেও করপোরেশনের গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এই ৯ গাড়ির পেছনে জ্বালানি তেল বাবদ ৫১ মাসে সিটি করপোরেশনের ব্যয় প্রায় ২ কোটি টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী, মেয়রের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে সার্বক্ষণিকভাবে বরাদ্দ থাকে একটি গাড়ি। গাড়িটি চালাবেন সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখার একজন চালক। তবে তাপস মেয়র থাকার সময় এ নিয়ম মানা হয়নি।

মেয়র থাকার সময় তাপস ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে ৯টি গাড়ি বরাদ্দের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ৪ অক্টোবর বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব পালন করছি দেড় বছর ধরে। এর আগে থেকেই তিনি (তাপস) একাধিক গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন। তিনি যদি নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত কিছু করে থাকেন, তা হিসাব করলেই বের হয়ে আসবে।’

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হন তাপস। তবে দায়িত্ব নেন ওই বছরের মে মাসে। গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই দিন আগে অনেকটা গোপনে দেশ ছাড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

Spread the love