এসএসসি: বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নও ফাঁস

এসএসসির প্রথম পরীক্ষার ‘বাংলা প্রথম পত্র’ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আর ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এই পরীক্ষা। এভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাকরা ক্ষুদ্ধ, বিরক্ত এবং শঙ্কিত। শনিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায় বাংলা। শেষ হয় দুপুর ১টায়।

শনিবারের পরীক্ষা শুরুর পৌণে ১ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে তা ফেসবুকে চলে আসে। প্রশ্নপত্রটি ওই গ্রুপে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অনেক গ্রুপ ও পেজে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যাবে তা বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বিজ্ঞাপন আকারে দেয়া হয়েছিল। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে প্রশ্ন পেতে হলে এই গ্রুপটিকে লাইক দিন।

শনিবার সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। শুধু প্রশ্ন নয়, উত্তর সহ সেট বহুনির্বাচনি প্রশ্ন এসব গ্রুপে ফাঁস করা হলে তা ভাইরালও হয়ে যায়।

এছাড়া ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সকাল ৯টা ১৬ তে ‘হিমুর ছায়া’ নামের একটি আইডি থেকেও উত্তরসহ প্রশ্ন ইমেজ আকারে পাঠানো হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তব্যরত কতিপয় অসাধু শিক্ষক প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে ফাঁসকারী চক্রের কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল হবে। কিন্তু এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা তার প্রমাণ খোঁজেনি মন্ত্রণালয়। আর পরীক্ষা বাতিলের ঘটনাও ঘটেনি। আর প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে শিক্ষামন্ত্রণালয় ফেসবুক বন্ধের প্রস্তাব দিলেও যৌক্তিকতা বিবেচনা না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে শনিবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, আগে বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া প্রশ্ন মিলিয়ে দেখেছি। মেলেনি। এ কারণে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলা যাবে না।

যে লিংকগুলো থেকে প্রশ্নপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি এব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা এসব উৎস খোঁজার চেষ্টা করছেন।

তবে পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় একটি অনলাইন গণমাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেছেন, লাখ লাখ সৎ মানুষের মধ্যে যদি একজনও অসৎ হন, তাহলে সবার সততাকে ওই একজনই প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। এ কারণে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না, প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। ফলে এটি একটি অসহায় অবস্থা। যদি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়, তাহলে সেটা হবে সৌভাগ্যের ব্যাপার। প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে বিরাট অংকের টাকা পুরস্কার দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন।

বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এসএসসিতে এবার অভিন্ন প্রশ্নপত্রে হচ্ছে সব বোর্ডের পরীক্ষা। শনিবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ৮৯ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়। এছাড়া অনুপস্থিত ছিল ১০ হাজার ২১০ জন।

Spread the love
%d bloggers like this: