মৃত্যুর পরও কন্যার মুখ দেখতে পারেননি অভাগিনী মা

প্রতিনিধি: নয় মাস আগে স্থানীয় একটি সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে রাশেদা আক্তার ও আনোয়ার হোসেনের নয় বছরের দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে। বৈঠকে দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাশেদার কোল থেকে কেড়ে নেয় তাঁর আট বছর বয়সী আদরের একমাত্র কন্যা শাহানা আক্তার আঁখিকে।
এর পর দীর্ঘ নয় মাস মেয়েকে একপলক দেখতেও দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পরও আদরের সন্তানের মুখ দেখতে পাননি অভাগিনী মা রাশেদা।

গতকাল শনিবার মিরসরাইয়ের কাটাছড়া ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামে শিশু আঁখির নানার বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার মা রাশেদা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আর বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার মেয়েকে দীর্ঘ ১০ মাস আমাকে একপলক দেখতে দেওয় হয়নি। ফোন করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিত না। উল্টো আমার দেবর আলমগীর হোসেন হুমকি দিত। ’

তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর শিশু সন্তানকে নির্যাতন করে কীটনাশক খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যার কারণে মৃত্যুর পর আঁখিকে গোপনে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাফন করার চেষ্টা চালিয়েছে।

রাশেদা আরো অভিযোগ করেন, ঘটনার রাতে পুলিশ আঁখির লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর কাছে হস্তান্তর না করে অভিযুক্তদের কাছে হস্তান্তর করে। দাফনের আগে একবারের জন্যও মেয়ের মুখ তিনি দেখতে পাননি।

এ বিষয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে রাশেদা আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর আমি থানায় গিয়েছি। পুলিশ আমাকে জানিয়েছে আঁখিকে তার বাবার পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ’

অবশ্য এ বিষয়ে মিরসরাই থানায় শিশু আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) থোয়াইন চাকমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মাকে কোথায় খুঁজে পাব? শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বাবার বাড়িতে, তাই বাবার বাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ’

এছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, শিশু আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় তার দাদি নূরজাহান বেগম এবং ফুফু সেলিনা আক্তারকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যু রহস্য কিনারা করা যায়নি।

গতকাল শনিবার ঘটনাস্থল মিরসরাই পৌর সদরের এমবি টাওয়ারে (শিশু আঁখির বাবার ভাড়া বাসা)  গিয়ে দেখা যায়, বাসা তালাবদ্ধ রয়েছে। ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল থেকে ওই বাসায় কেউই ফেরেনি। আঁখিকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তাও তাঁরা জানেন না।

Spread the love
%d bloggers like this: