রোহিঙ্গা নির্বংশ করতে নিষ্পাপ শিশুহত্যা

জ্বলছে রাখাইন। পুড়ছে রোহিঙ্গা।
ঘরবাড়ি-সহায়-সম্বল সব পুড়ে ছাই। নিজের দেশে নিজেদের ঠাঁই নেই! কেউ হারিয়েছে মা। কেউ বাবা। এতিম হয়ে গেছে অসংখ্য শিশু। দুর্গম পাহাড় ডিঙিয়ে, বিপদসঙ্কুল ঢেউয়ের সাগর-নদী পাড়ি দিয়ে, মরতে মরতে বেঁচে এরা আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশই তাদের কাছে একমাত্র আশা-ভরসা। টেকনাফ থেকে উখিয়ার পথে পথে এখন কান পাতলেই শোনা যায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতে নিপীড়নের শিকার শত শত শিশুর আহাজারি। রোহিঙ্গা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে এসব নিষ্পাপ শিশুকে যেন টার্গেট করেছে দেশটির সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীরা …

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অন্যতম টার্গেট শিশুরা। শিশুরাই রাখাইনে সেনাদের চলমান ‘অপারেশন কিলিং’-এ সবচেয়ে বেশি শিকার।
শিশুদের হত্যার জন্য সেনা ও সেই দেশের রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন (মগ) অস্ত্র-শস্ত্রও ব্যবহার করে না। শিশুদের হত্যায় অস্ত্র ব্যবহারকে সেনারা অহেতুক মনে করে। তাই শিশু পেলেই জ্বলন্ত আগুনে ছুড়ে মারে সেনারা। একজন শিশুকে হত্যা বা আঘাত করতে পারলেই সেনা ও মগ সন্ত্রাসীরা হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে জয়ধ্বনি দেয়। পাড়ায় আগুন দিয়ে পলায়নপর রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিকারের প্রধান লক্ষ্য থাকে রোহিঙ্গা শিশুরা। এ সময় সেনা ও মগ সন্ত্রাসীরা ধারালো দা এবং ভারী লাঠি নিয়ে আঘাত করে শিশুদের।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ, অগ্নিদগ্ধ ও আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু। এসব রোহিঙ্গা শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে রাখাইনে রোহিঙ্গা শিশুরা সেনাদের টার্গেট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের মতে, বাস্তবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্বংশ করার উদ্দেশ্য নিয়েই মিয়ানমার বাহিনী শিশুদের টার্গেট করেছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী রবিবার জানান, এখন ৯০ জন রোহিঙ্গা ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালের ওয়ার্ডে। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এসব আহতদের মধ্যে ৫৬ জন সার্জারি, ৬ জন মেডিসিন, ১০ জন শিশু, ৬ জন গাইনি ও ২ জন ডায়রিয়ায আক্রান্ত।

আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শাহীন বলেন, ‘আড়াই শ শয্যার এ হাসপাতালে সাড়ে ৬০০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৭০ জন আহত রোহিঙ্গা ভর্তি হন হাসপাতালে। তাঁদের অনেকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। এছাড়া এখানে রোহিঙ্গা নারীর পাঁচটি নরমাল ডেলিভারি এবং তিনটি সিজার ডেলিভারি হয়েছে। ’

Spread the love
%d bloggers like this: