শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ, টিকে থাকুন না টিকিয়ে রাখানোদের খেলায়

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি রসিকতা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি হিমুর একটা বইয়ে লিখেছিলেন- আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে…এই লাইনের মাঝে যদি র‍্যাপ সংয়ের মতো ফরফর করে বলা হয়- আজ বৃষ্টি লাগবে খিচুড়ি সাথে ইলিশ মাছ ভাজা আহা কি মজা… এরপর আবার আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে…!

মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ইয়ার্কি দেখেছি কেকা ফেরদৌসীর। তিনি একদিন চ্যানেল আইতে ডাল আর আলু দিয়ে কি একটা ঘ্যাট করতে করতে খুশি খুশি গলায় বললেন- এটা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় খাবার…আমার মা তখন বিরক্তি নিয়ে বললেন- এরে কেউ কয়না কেন যে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে গেছিল, পিকনিক করতে না!

তো যাই হোক, একবার হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদ আর ইমদাদুল হক মিলনকে অতি কটাক্ষ করে একটা জ্বালাময়ী বই লিখলেন, বইয়ের নাম- সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদ আর ইমদাদুল হক মিলন দুইজন নষ্ট ও তাঁর ভাষায় বাজারি লেখক। এদের বই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয় বলে এরা নষ্ট।

ইমদাদুল হক মিলন ক্ষেপে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে বললেন- আমাদের এতো বড় অপবাদ দিলো, আর আপনি কিছু বলবেন না? হুমায়ূন আহমেদ হাসলেন এবং জানালেন তিনি কিছুই বলবেন না। কিন্তু ইমদাদুল হক মিলন এরপরের বই হুমায়ুন আজাদকে উৎসর্গ করলেন- সেই বইয়ের নাম: বনমানুষ!

কাজেই জেনে রাখুন- মানুষ তাঁকেই সবচেয়ে বেশি ঈর্ষা করে তাঁকে, সে যার মতো হতে চেয়েও হতে পারেনি। সমগ্র বাঙালি পুরুষের ঈর্ষাপুরুষের নাম রবীন্দ্রনাথ। বাঙালি পুরুষ প্রেমে-কামে-অভিমানে কোন নারীকে কল্পনা করে যখনই কবিতা লিখতে গেছেন তখন তাকে রবীন্দ্রনাথ আছর করেনি একবারের জন্যও, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়!

বাঙালি লেখকরা আজীবন চেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের মতো বই বিক্রি হোক তাদের, যখন সেটা ঘটেনি তখনই তিনি বাজারি লেখক! আবার হুমায়ূন হাত পেতেছেন জীবনানন্দ দাশের কাছে, অয়োময় তো আসলে জীবনানন্দের কবিতাই, মেঘ বলেছে যাবো যাবো যেমন গান রবীন্দ্রনাথের!

রবীন্দ্রনাথের দেড়শ তম জন্মদিন পার হওয়ার পরও রবীন্দ্রনাথ টিকে আছেন অলিগলির মাদ্রাসা আর ধর্মান্ধ লোকেদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। যে পাকিস্তান মৃত রবীন্দ্রনাথকে ভয় পেয়ে নিষিদ্ধ করেছিল, সেই পাকিস্তান পর্যন্ত টিকে নাই! হুমায়ূন আহমেদ টিকে আছেন তাঁকে বাজারি লেখক বলাদের চোখে চোখ রেখে! মৃত হুমায়ূন আহমেদের বই জীবিতদের নতুন লেখা বইয়েরও ঘুম হারাম করে দেয়। আপনি নিজেকে যত প্রকান্ডই ভাবেন, মনে রাখবেন অতি ক্ষুদ্র পিঁপড়া টিকে আছে কিন্তু বিশাল ডায়নোসর টিকে নাই!

পৃথিবীতে টিকে থাকার এই খেলাটা অদ্ভুত। এই খেলা বুঝতে পারা সম্ভব না বলেই জোর দিয়ে বলা সম্ভব না কে টিকবে আর কে টিকবে না! এক হাজার বছর আগে আপনার পূর্বপুরুষ কে ছিলো সেই তথ্যই যেখানে টিকে নাই, সেখানে আপনি মারা যাওয়ার পর টিকে থাকবেন কি থাকবেন না সেই বিতর্ক হাস্যকর না? সেইখানে হুমায়ূন আহমেদকে টিকিয়ে রাখা না রাখারই বা আপনি কে?

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ! টিকে থাকুন না টিকিয়ে রাখানোদের খেলায়!

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
Spread the love
%d bloggers like this: