সাবধান : বাচ্চাদের পোশাকেও রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ

sabdhan - bacchader posakeoদুরন্ত ডেস্ক:
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাকে বিপজ্জনক কিছু রাসায়নিক পদার্থ খুঁজে পেয়েছে। এতে রয়েছে বিভিন্ন দামের জামাকাপড়। এই সব বিষাক্ত দ্রব্য এবং এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্রিনপিসের সদস্যরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বা”চাদের ৮২টি জামাকাপড় কেনেন। এ জন্য সংগঠনের কর্মীরা ২৫ দেশের বিভিন্ন দোকানে যান। এর মধ্যে ১২টি নামি কোম্পানিও ছিল।
কিছু রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
ল্যাবরেটরির পরীক্ষার ফলাফলে পরিবেশ রক্ষাকারীরা কিছু রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ‘বিষাক্ত পদার্থের বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, পোশাক-আশাকে যে পরিমাণ বিষাক্ত রাসায়নিক বস্তু পাওয়া গেছে, তা সাথে সাথে মারাত্মক কোনো ঝুঁকি বয়ে আনে না, জানান গ্রিনপিসের মানফ্রেড সামটেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে।
তবে মা-বাবাকে বাচ্চাদের জামাকাপড় কেনার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। আজকাল সব কাপড়চোপড় তৈরিতেই বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
অবশ্য যারা পোশাক তৈরি করেন তাদের জন্য বিপদটা বেশি। রং, বুনন ও সেলাইয়ের কারখানাগুলোর শ্রমিকদের প্রতিদিন এই সব বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসতে হয়। তাঁদের এ ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
কেনা পোশাকগুলোতে যে সব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে, তার কয়েকটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে গ্রিনপিস।
কয়েকটি দৃষ্টান্ত :
ফেথালেটিস বা ফেথালিক অ্যাসিড-এর কথাই ধরা যাক। এই পদার্থ প্লাস্টিক নরম করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। জন্মগত ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা দিতে পারে। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায় এটি কমে যেতে পারে। কিন্তু এজন্য এত দীর্ঘ সময় লাগে যে ততদিনে এই পদার্থ শরীর শোষণ করে নেয়।
আছে ননাইলফেনল এথক্সিলেটেস বা এনপিই নামের পদার্থ। এই পদার্থ দিয়ে কাপড়চোপড় রং করার পর ধোয়া হয়। এটিও হরমোন সিস্টেমকে উল্টাপাল্টা করে দিতে পারে। এই দ্রব্যকে জৈবিক উপায়ে দূর করা যায় না। এটি জীবিত অর্গানিজমের টিস্যুতে ঢুকতে পারে। জলাশয়ের জীবজন্তুর জন্য এই পদার্থ অত্যন্ত ক্ষতিকর। এশিয়ায় বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হলেও ইউরোপের নর্দমার পানিতে যাতে এই পদার্থ না ঢোকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। এ জন্য বিশেষ নীতিমালাও রয়েছে।
কিন্তু ওয়াশিং মেশিনে কাপড়চোপড় ধোয়া হলে ময়লা পানির সঙ্গে এই বিষাক্ত পদার্থও নর্দমায় ঢুকে পড়তে পারে।
রেনকোট ও জুতাতে এই পদার্থের অস্তিত্ব :
পিএফসি জাতীয় রাসায়নিক পদার্থও বেশ বিপজ্জনক। রেনকোট ও জুতাতে পাওয়া গিয়েছে এই পদার্থ। এমনকি সাঁতারের পোশাকেও এই দ্রব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে গ্রিনপিস। ‘হয়তো বা এই পোশাকে মানুষ তাড়াতাড়ি সাঁতার কাটতে পারে,’ বলেন সানটেন।
পিএফসি অর্গানিজমে ঢুকতে পারে। দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। সারা বিশ্বে বিস্তৃতও হতে পারে। মেরু ভালুক ও পেঙ্গুইনের যকৃতে এই পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত ছড়িয়েছে এটি, বলেন সানটেন। পরিবেশের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তার সবকিছু এখনো জানা যায়নি। পরিবেশবাদীরা মনে করেন, এর ফলে ক্যান্সার ও কিডনির অসুখ বিসুখ হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাচ্চাদের খেলনায় রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা জারি করেছে। অবশ্য বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নয়।
গ্রিনপিসের রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি জানিয়েছে তাদের পণ্যে উল্লিখিত দ্রব্যের পরিমাণ এত কম থাকে যে স্বাস্থ্যের জন্য তা ক্ষতিকর নয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে বলে জানিয়েছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে

Spread the love
%d bloggers like this: