সু চি এখন নিপীড়কদের পক্ষে

মিয়ানমারের ডি ফ্যাকটো নেতা অং সান সু চি একসময় ‘নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর’ উপাধি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সু চির সামনে উপস্থাপিত হওয়া নৃশংস অভিযোগ গুলোর জবাবে বলে বসলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা, মিয়ানমারে রক্তপাত হয়েছে কিন্তু গনহত্যা হয়নি।যে ছিলো নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক সে নিলেন জান্তা সরকারের মতো নিপীড়কের পক্ষ।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্র বাহিণীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনের শুনানি। সেখানে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি যেভাবে গণহত্যার অভিযোগকে এককথায় খারিজ করে দিলেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে তুমুল সমালোচনা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া সু চির বক্তব্য প্রমাণ করে যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তাঁর কোনো প্রকার সহানুভূতি অবশিষ্ট নেই। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও তাঁর চিন্তা–ভাবনায় তফাত নেই বললেই চলে।

দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাদীপক্ষ গাম্বিয়া ও মিয়ানমার তাদের বক্তব্য দিয়েছে। অভিযোগের শুনানিতে গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণও দাখিল করেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র ও নথিপত্রও দাখিল করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি নিজেদের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, তাঁর দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। তাঁর দাবি, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়।

অং সান সু চি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন । গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর আত্মত্যাগ পেয়েছিল কিংবদন্তির সম্মান। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজ হাতেই সেই নৈতিক ভাবমূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন সু চি। মন্ত্রিসভায় থাকা সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের গত বছর ‘সুইট’ বলে সম্বোধন করেছিলেন তিনি। এবার তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানবতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন অং সান সু চি। 

Spread the love
%d bloggers like this: