আজকের কন্যাশিশু আগামী দিনের মা

নাসরুল কবির লিমনঃ
ইসলামি ভাষ্য অনুযায়ী, কন্যাশিশু ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য বেহেশতের শুভবার্তা বয়ে আনে এবং সংসারজীবনকে মায়াময় করে তুলে। এরা ঘরের সৌন্দর্য,ঘরকে আলোময় করে তোলে। কিন্তু বর্তমান সমাজে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে অনেকেই খুবই বিব্রতবোধ করেন। একাধিক কন্যা হলে অত্যন্ত হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ার অপরাধে স্ত্রীকে বিভিন্ন রকম অমানুষিক নির্যাতন করে থাকে।
এমনকি তালাক দেওয়ার মতো নির্মম ও অত্যন্ত জঘন্য কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না কেউ কেউ। নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয় জন্মধাত্রীকে। নির্মম ব্যাপার হচ্ছে,আমাদের পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র এমনকি বিশ্বব্যবস্থায় বিরাজমান বাস্তবতা কন্যাশিশুর অধিকার সুরক্ষার পক্ষে মোটেই অনুকূলে নয়। অথচ কন্যাসন্তান প্রতিপালনে রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে উদাত্তকণ্ঠে আহবান জানিয়েছেন। অসংখ্য হাদিসে কন্যাশিশু প্রতিপালনের মর্যাদা ও অশেষ পুণ্যের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। মহানবী (সা.) পিতার অন্তরে কন্যাসন্তানের প্রতি গভীর মমত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানকে বয়োপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে,কিয়ামতের দিন আমিও তাঁর সাথে এরূপ কাছাকাছি থাকব বলে তাঁর আঙুলগুলো মিলিয়ে দেখান। (মুসলিম)
তাছাড়া মহানবী (সা.) তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) এর সঙ্গে যে ধরনের উঁচুমানের ব্যবহার করতেন,তা ছিল তৎকালীন সমাজের নিয়মকানুন বহির্ভূত। সেসময় কন্যাসন্তান জন্ম নিলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হত। অথচ তিনি কন্যাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন,যেখানে যেতেন শিশু ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম,যার প্রথম সন্তান মেয়ে।
এছাড়াও আমাদের ভাবতে হবে যে, আজকের কন্যাশিশুই আগামী দিনের মা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিয়ামক শক্তি। কিন্তু এ সমাজেও কন্যাশিশুরা পরিণত বয়সে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এভাবে কন্যাশিশুকে অধিকারবঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যের সূত্রপাত হয় তার খেসারত শুধু কন্যাশিশু আর নারী নয়,গোটা জাতিকে দিতে হয়। এ কঠিন বাস্তবতায় ইসলামে কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষা ও বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়া প্রয়োজন। কন্যাশিশুর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য,অবহেলা,নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এখনই।

Spread the love
%d bloggers like this: