নারায়ণগঞ্জের সড়কে নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের ভয়াল চিত্র

প্রতিনিধি: সাধারণত দেখা যায় শিশু শ্রমিক কাজ করছে বিভিন্ন কারখানায়। কিন্তু এবার এই চিত্রের ব্যতিক্রম হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায়। এখানে জনসম্মুখে ব্যস্ত রাস্তায় অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অতন্ত ঝুকিপূর্ণ কাজ রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে দেখা যায় এক শিশু শ্রমিককে। সেখানে সে জলন্ত চুলার কাছে দারিয়ে রাস্তার পিচ ও পাথর মিলানোর কাজ করে। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চাষাঢ়া হতে খানপুর মেট্রো হল পর্যন্ত নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে এই সংস্কার কাজ করছে। পিচ ঢালাইয়ের আগুনের অগ্নিকুন্ডলীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড ঝুঁকির এই কাজটিও তাঁকে সারতে হচ্ছে জীবিকার তাগিদেই। নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক সংস্কারে নিয়োজিত ওই শিশুকে মিশনপাড়া ও চাষাঢ়ার মাঝামাঝি রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে কাজ করতে দেখা গেছে। আর এই ছবি ও ভিডিওটি রীতিমত আতকে উঠার মত।

নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে নরসিংদী পর্যন্ত ১ হাজারের মতো শিল্পকারখানা রয়েছে, যেখানে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন এবং যার প্রায় অর্ধেক শিশু। এছাড়া অনেক খাবার রেস্তোরাঁয়ও শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিশু শ্রমিকদের বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির অভাব রয়েছে।
দেশে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজকে চিহ্নিত করেছে সরকার। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শিশু শ্রমিক মারধরের শিকার হয়। আর প্রায় ৪৬ শতাংশ শিশু শ্রমিককে গালাগাল করা হয়। যেসব শিশু শ্রমিক গৃহকর্মীর কাজ করছে, তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭ শতাংশ হয় ধর্ষণের শিকার।

শ্রম আইন ও আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী যে কোনো কারখানা কিংবা প্রতিষ্ঠানে ১৪ বছরের নিচের কোনো শিশুকে কাজে যুক্ত করা যাবে না। আর ১৪ বছরের উপরের কোনো শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। তাদের হালকা কাজে নিয়োজিত করলেও লেখাপড়া ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এদিকে শিশু শ্রম আইন থাকলেও সেটি মানছেন না নারায়ণগঞ্জের অনেক কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। অনেকে আবার শ্রম আইনের ফাঁকফোকরের কারণে শিশু শ্রম আইন অমান্য করেও বেঁচে যাচ্ছেন। সারা দেশের মতো শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জেও নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের শিকার হচ্ছে অসংখ্য শিশু। এদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।

যে বয়সে তাদের খাতা-কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, সে বয়সে শুধু দারিদ্রের কশাঘাতে ওরা শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। এসব শিশুর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ ও নিষিদ্ধ শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। শিশু শ্রম সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন কারখানার অসাধু মালিকেরা শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর কারখানার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা দেখেও না দেখার ভান করছে।

Spread the love
%d bloggers like this: