লাস ভেগাসে কনসার্টে গুলি নিহত ৫৯: হামলাকারী স্টিফেন প্যাডক

দুরন্ত ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে একটি ক্যাসিনোর পাশে উন্মুক্ত এক কনসার্টে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অন্তত ৫৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়।
নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। স্থানীয় সময় রবিবার রাত ১০টার দিকে শহরের ম্যান্ডালে বে হোটেলের ৩২ তলার একটি কক্ষ থেকে নিচে কনসার্ট লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ‘ম্যাস শুটিং’ বা গণহারে গুলি করে হত্যার ঘটনা।

লাস ভেগাস পুলিশ বলছে, ৬৪ বছর বয়স্ক স্থানীয় স্টিফেন প্যাডক নামের এক ব্যক্তি একাই গুলি চালিয়েছে। তাদের ধারণা, হোটেল কক্ষটিতে যাওয়ার আগেই হামলাকারী নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করেছে। কক্ষটিতে অনেক অস্ত্র পাওয়া গেছে। পুলিশের ভাষ্য, সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এর মিল থাকলেও তারা এখনো হত্যার মোটিভ জানতে পারেনি। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীর সঙ্গে এক নারীকে দেখা গেছে। তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস গত রাতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

হামলার পর পুরো লাস ভেগাস শহরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিমানবন্দর তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে কয়েকটি ফ্লাইট অবতরণ করতে দেওয়া হয়নি। খবর ছড়িয়ে পড়ে, শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চলছে। একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি গুজব, হামলা শুধু ম্যান্ডালে বে হোটেলের পাশেই হয়েছে।

নেভাডা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর লাস ভেগাসে গত শুক্রবার থেকে কাউন্টি মিউজিক ফেস্টিভাল শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে লাস ভেগাস উপত্যকাজুড়েই বিভিন্ন হোটেল ও খোলা জায়গায় কনসার্টের আয়োজন করা হয়। রবিবার ছিল কনসার্টের শেষ দিন। এর  মধ্যে ম্যান্ডালে বে হোটেলের পাশে একটি ক্যাসিনোর কাছে ‘রুট ৯১’ নামের একটি কনসার্ট চলছিল। রবিবার রাতে এ কনসার্টে দুই হাজার ২০০ লোক অংশ নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কনসার্ট লক্ষ করে হঠাৎ গুলি চালানো হয়। আনন্দে মেতে ওঠা লোকজন চিত্কার দিয়ে পালাতে থাকে।

লাস ভেগাস মেট্রো পুলিশের শেরিফ জোসেফ ল্যাম্বার্ড বলেন, ‘আমরা কমপক্ষে ৫৮টি মৃতদেহ পেয়েছি। আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক। ’ তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি ট্র্যাজিক ঘটনা। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের আগে ছিল না। ’ তিনি আরো বলেন, পুলিশ ও এফবিআই এখনো হামলাকারী প্যাডকের পটভূমি (ব্যাকগ্রাউন্ড) জানার চেষ্টা করছে। সে হোটেলের যে কক্ষে থাকত, সেটি থেকে অনেক অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি জানান, প্যাডকের একজন নারী সঙ্গীকে আগে দেখা গেছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্যাডক শুরুতে ব্রাশফায়ার করে, যা অনেকক্ষণ চলে। পরে তাকে পুনরায় গুলি ভরতে দেখা যায় এবং সে তার পাগলামি চালাতে থাকে। মনিক ডেকার্ফ নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা কাচ ভাঙার মতো শব্দ শুনতে পাই। সুতরাং এমন অবস্থায় আপনি দেখতেই চাইবেন কী ঘটছে। এরপরই আমরা পপ, পপ, পপ শব্দ শুনতে পাই। আপনিও ভাবতে পারেন সব ঠিকই আছে এবং আমরা ভালোই আছি। তখনো কোনো গুলি চালানো হয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই পুনরায় শুরু হয়। তাঁর বোন রিচেল বলেন, ‘আমাদের ডান দিক থেকে গুলিগুলো আসছিল। ’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, হঠাৎ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির আওয়াজে কনসার্ট থমকে যায়। দর্শকরা খোলা জায়গায় মাথা নিচু করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ড বিরতির পর আবার গুলির শব্দ শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি, চিত্কার।

লন্ডন থেকে যাওয়া মাইক থমসন নামের ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি লোকজনকে আতঙ্কে দৌড়াতে দেখি। একজনের সারা গায়ে রক্ত দেখে আমি বুঝলাম, সাংঘাতিক কিছু ঘটেছে। ’ লোকজন দৌড়াচ্ছিল এবং চিত্কার করছিল।

হামলার সময় ওই কনসার্টের মঞ্চে গান গাইছিলেন দেশটির বিখ্যাত শিল্পী জেসন আলডিন। গান শুরুর পরপরই গুলির শব্দের মধ্যে থমকে যেতে হয় তাঁকে ও তাঁর দলকে। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ রাতে যা ঘটল, তা ভয়ংকর বললেও কম হয়। কী বলব, আমি বুঝতে পারছি না এখনো। আমি আর আমার দলের সবাই সুস্থ আছি। ’ হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের আনন্দের একটা রাত কাটানোর কথা ছিল, সে জন্যই তাঁরা এসেছিলেন; কিন্তু যা ঘটল, তাতে আমার বুক ভেঙে গেছে। ’

এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একটি টুইট করেছেন। লিখেছেন, ‘গড ব্লেস ইউ’। এ নিয়ে সোমবার সকালে (বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে) তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা।

এদিকে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী হামলাকারীকে তাদের অনুসারী বলে দাবি করেছে। আইএসের মুখপাত্র আমাক সংবাদ সংস্থায় দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি হামলাকারীর নাম উল্লেখ না করে জানায়, ওই ব্যক্তি কয়েক মাস আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লাস ভেগাসের হামলাকারী ইসলামিক স্টেটের একজন সৈনিক। পশ্চিমা জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ’ তবে আইএসের এই দাবির সত্যতা কিংবা হামলাকারীর মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার বিষয়টি গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে অস্ত্র আইন সবচেয়ে শিথিল নেভাডায়। নাগরিকরা সেখানে অস্ত্র বহন করতে পারে এবং অস্ত্রের মালিক হিসেবে তাদের নিবন্ধনও নিতে হয় না। দোকান থেকে অস্ত্র কেনার সময় ক্রেতার তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেই ক্রেতা আবার অন্যের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে দিতে পারে। এর আগে গত বছর ১২ জুন ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে সমকামীদের একটি নৈশ ক্লাবে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করে এক যুবক। এত দিন পর্যন্ত সেটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা, যার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

Spread the love
%d bloggers like this: