সন্তানের যত্ন নিতে

‘আর বলবেন না, আমার বা”চাটা এত দুষ্ট’ ‘ওফ, ছেলেটা কথা শোনে না’। আমাদের দেশের মায়েদের এসব মন্তব্য প্রায়ই করতে শোনা যায়। সন্তানদের সমস্যা অনিবার্য বিষয়। এটিকে ঝামেলা হিসেবে না দেখে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।বিশেষজ্ঞরা আলোচনা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। লিখেছেন তামান্না শারমিন

বয়স সীমা ২ থেকে ৮ বছর
একদম শৈশব থেকেই যেসব সমস্যা শুরু হয় তার মধ্যে অন্যতম বা”চা খেতে চায় না।
০০ বাচ্চাকে তার মতো করে খেতে দিন।
০০ খাবার টেবিলে বসে খাওয়ান। বাড়ি ঘুরে কিংবা টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন না।
০০ ক্ষিদে লাগতে দিন। প্রয়োজনে দিনের একবেলার খাবার বাদ দিন। ক্ষিদে পেলে এমনিই খাবে।
০০ বাড়ির তৈরি সুস্বাদু খাবার দিন। তবে এক খাবার প্রতিদিন দেবেন না।
০০ নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ান।
চিপসের মতো স্ন্যাকস যতো পারবেন কম খাওয়াবেন।
এই বয়সে আরো একটি গুরুতর সমস্যা হলো বা”চা কথা শোনে না।
০০ বাচ্চাকে পরিণত মানুষ হিসেবে দেখুন।
০০ বাচ্চাদের মাতামতকে গুরুত্ব দিন। ‘ওতো বা”চা, কিছু বোঝে না’ এধরনের মন্তব্য ওদের সামনে করবেন না।
০০ নিজেদের আচরণ ঠিক রাখুন। কারণ এই বয়স থেকেই বাচ্চারা অনুকরণ করতে শেখে।
০০ বাচ্চার সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনুন। তুচ্ছ মনে হলেও শুনুন। কারণ ওখানেই লুকিয়ে আছে বড় সমস্যার বীজ।
০০ অতিরিক্ত শাসন থেকে কখনোও যেন সন্তান কষ্ট না পায় অর্থাৎ যাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়।
০০ অফিস অথবা ব্যবসার টেনশন বাড়িতে আনবেন না।
০০ এই বয়সে বাচ্চার আঙ্গুল চোষার মতো বিভিন্ন বদ অভ্যাস সৃষ্টি হয়।
০০ মনে থাকা উদ্বেগ, আকাঙক্ষা, নিরাপত্তাহীনতার অভাবে দু’আড়াই বছর বয়সে মুদ্রাদোষ তৈরি হয়।
০০ বাবা মায়ে একাকীত্বে অনেক বাচ্চা মনে করে তারা আর তাদের ভালোবাসা পাচ্ছে না।
০০ রাতারাতি মুদ্রাদোষ ছাড়ানো সম্ভব নয়। মুদ্রাদোষ ছাড়ানোর জন্য ছোটখাটো উপহার দিন।
০০ বিছানা ভেজানোর সমস্যা এড়াতে পেপার টয়লেট ট্রেনিং দিন। সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ানোর পরিমাণ কমান। মাঝরাতে একবার উঠিয়ে টয়লেট করান।
০০ ৫ বছরের পরও বিছানা ভেজালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বাচ্চারা যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তখন অস্বস্তিবোধ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
০০ নিজে সঙ্গে করে নিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
০০ স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
০০ পরীক্ষা ভীতি এড়াতে তাকে বোঝান পরীক্ষাটা তেমন ভয়ের কিছু না।
০০ ভয় কাঁটাতে ভয় দেখাবেন না। কাঁটা দিয়ে সব সময় কাটা তোলা যায় না।
০০ যুক্তি দিয়ে ভয় কাটানো যায়না। বা”চাদের সাহস দিন।
০০ যে জিনিসে বাচ্চা ভয় পায় সেটা নিয়ে আলোচনা বা হাসাহাসি করবেন না।
০০ চাকরিজীবী মায়েরা বাচ্চার আয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অসময়ে বাড়িতে ফিরে পরিচিতি বোঝার চেষ্টা করুন।
ছোট্ট মেয়ের বাবা যারা, তাদের জন্য রয়েছে বোঝার কিছু বিষয়
০০ পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ছোট্ট মেয়েটির ধারণা শেখা শুরু হয় বাবার মাধ্যমেই।
০০ মায়ের বিকল্প হতে চাইবেন না। বরং পার্কে গিয়ে মজা করুন। বাচ্চার প্রিয় কার্টুন বা হিরোর মতো মজা করে গান গেয়ে শোনান।
০০ আগে বন্ধু হবেন পরে অভিভাবক।
০০ বাচ্চা যদি গান, ছবি আঁকা শেখে তার সাথে আপনিও করুন।
০০ আপনি বাবা বলে, পুরুষ বলে কোমল মনোভাব থেকে বিরত থাকবেন না। এর ফলে দূরত্ব বাড়বে। স্নেহ মমতা প্রকাশ করুন। মেয়েরা ভালোবাসা ও যত্ন পেতে পছন্দ করে। বন্ধন দৃঢ় হবে।
০০ বাবা বলে প্রভুত্ব না খাটিয়ে খোলাখুলি কথা বলে সমস্যার সমাধান করুন।
০০ আপনার যথাযথ সঙ্গ আপনার মেয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।
মাঝে মাঝে বা”চাদের মধ্যে একটি সমস্যা দেখা দেয় যা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার নামে পরিচিত
০০ স্কুলে সদ্য ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে অন্যমনষ্কতা ও দুরন্তপনা লক্ষ্য করা যায়।
০০ আড়াই থেকে চার বছর বয়সের মধ্যে এডিএইচএডি হয়।
০০ উদ্বেগ, অবসাদ থেকে এই রোগ হয়
০০ পুরো প্রশ্ন না শুনেই উত্তর দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
০০ একটি কাজ শেষ না করে আরেকটি কাজ শুরু করা।
০০ খেলনা, পেনসিল, বই ইত্যাদি কোথায় রেখেছে তা মনে রাখতে না পারা।
০০ পরিবারে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখুন।
০০ ধৈর্য্যহারা হবেন না।
০০ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
বয়সসীমা ৮ থেকে ১২ বছর
শিশুদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ খুব প্রখর। এ জায়গায় বিভিন্ন সমস্যা হয়।
০০ অন্যের সামনে বকাবকি করবেন না।
০০ আপনি ওর সম্মানের ব্যাপারে সচেতন সেটা ওকে বুঝতে দিন।
০০ স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন। তাতে আপনার শিশুও শ্রদ্ধাবোধ শিখবে।
০০ ছোট ভুল স্বীকার করতে শেখান।
০০ অন্যের প্রতি দায়িত্ববান হতে শেখান।]
০০ ভাল কাজে বাচ্চাদের উৎসাহ দিন।
০০ সাফল্য না পেলে হতাশাজনক কথা বলবেন না।
০০ সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করুন। তবে চাপিয়ে দেবেন না।
অনেক শিশুর মধ্যে মারধর বা আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়
০০ আড্ডার ছলে ক্ষোভ ও অপ্রাপ্তির কথা বোঝার চেষ্টা করুন।
০০ সন্তানের বন্ধুদের সাথেও বন্ধুর মতো মিশুন।
০০ সারাক্ষণ ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দিন।
০০ জ্ঞান না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বোঝান।
০০ আমরা তোমার জন্য এতো করছি এধরনের কথা বলবেন না।
০০ টেলিভিশন বা সিনেমার প্রভাব খুব প্রত্যক্ষ। তাই বলে দেখা বন্ধ করে দেবেন না। যুক্তি করে বোঝান।
অনেক বাচ্চা বাসার কাজের লোকের সাথে দুর্ব্যবহার করে
০০ এ জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারিক পরিবেশ দায়ী।
০০ বাড়ির অন্য কেউ যাতে কাজের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে।
০০ বাচ্চা করে ফেললে কাজের লোকের সামনে বকাবকি না করে পরে তাকে বোঝান।
০০ কাজের লোককে সম্বোধন করতে শেখান।
০০ বোঝার চেষ্টা করুন যে কাজের লোক এখানে চাকরি করতে এসেছে।
০০ কাজের লোক নয় কারো সাথেই খারাপ ব্যবহার করতে হয়না বোঝান।
০০ বাচ্চাকে নিজের কাজ নিজে করতে শেখান।
অনেক বাচ্চার মধ্যে তোতলামি করার প্রবণতা দেখা যায়
০০ দুই থেকে দশ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যা দেখা যায়।
০০ আপনজনদের সাথে স্বাভাবিক থাকলেও শিক্ষক, অপরিচিত মানুষ দেখলে তোতলায়।
০০ অতিরিক্ত আদর ও শাসনও এর কারণ হতে পারে।
০০ জন্মের পর অপুষ্টি, অসুখ, অন্য সন্তানের প্রতি বেশি আদর ইত্যাদি থেকেও তোতলামি হতে পারে।
sontaner buddimotta ase sontaner buddimotta ase

Spread the love
%d bloggers like this: